শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটা: চা গাছের ক্ষতিকর পোকামাকড় দমন করতে হলুদ ফাঁদের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশপ্রেমী ও কীটপতঙ্গবিদদের একাংশ। তাঁরা বলছেন এক বিপদ এড়াতে গিয়ে আরেক বিপদ ডেকে আনা হচ্ছে। এর সপক্ষে তাঁদের বক্তব্য, ইয়েলো স্টিকি ট্র্যাপ নামে ওই ফাঁদে পরিবেশবান্ধব পতঙ্গ হিসেবে পরিচিত মথের নানা প্রজাতিও বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে। রাত্রিকালীন পরাগ সংযোগে সাহায্যকারী পতঙ্গ হিসেবে মথ আবার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। যদিও চা বাগানগুলি কিংবা চা গবেষণা সংস্থা’র (টিআরএ) বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর ফলে রাসায়নিক স্প্রে’র পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে। ফলে মথের মতো অন্যান্য উপকারী পতঙ্গকে বেশি সংখ্যায় বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে।
বর্তমানে চা বাগানের (Tea garden) ছায়াগাছের গোড়ায় হলুদ রং-এর ওই ফাঁদ ব্যবহার একরের পর একর জমিতে কার্যত গোটা উত্তরবঙ্গজুড়েই দেখা যায়। গ্রিন ফ্লাই, থ্রিপস, হেলোপেলটিসের মতো চা শিল্পের আতঙ্ক বিভিন্ন ধরনের রোগপোকাকে রাসায়নিক ছাড়াই দমন করার পদ্ধতিটি জনপ্রিয়ও হয়ে উঠেছে।
পরিবেশের ওপর কাজ করা উত্তরবঙ্গের অন্যতম শীর্ষ সংগঠন হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড ফাউন্ডেশনের (ন্যাফ) মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, ‘চা শিল্পকে অবশ্যই বাঁচাতে হবে। এটাই আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। তবে পোকা দমনে হলুদ ফাঁদে মথের মতো বহু উপকারী পতঙ্গ মারা যাচ্ছে বলে নানা স্থান থেকে খবর আসছে। বাস্তুতন্ত্রে মথের উপযোগিতা এককথায় অপরিসীম। ওই পতঙ্গ না থাকলে রাতে ফোটে এমন বহু ফুল হয়তো আমরা আর ভবিষ্যতে দেখতেই পাব না। তাই কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায় তা দেখতে হবে।’
কীটতত্ত্ববিদ ডঃ তুষারকুমার ঘোষালের কথায়, ‘চা বাগানে মথ, প্রজাপতির মতো বন্ধু পতঙ্গর অভাব নেই। তাদের আধিক্য দেখেই একটা এলাকার পরিবেশ কত ভালো রয়েছে তা বোঝা যায়। এটা ঘটনা হলুদ ফাঁদ ব্যবহারের ফলে সেগুলিও মারা যায়। ফলে বাস্তুতন্ত্রে যে বড় ক্ষতি হচ্ছে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। সংশ্লিষ্ট সব মহলই যদি এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসে তবে আখেরে উপকৃত হবে পরিবেশই।’
টিআরএ জানাচ্ছে, হলুদ ফাঁদের ব্যবহারের তিন ধরনের সুফল রয়েছে। প্রথমত, এর ফলে বাগানগুলিতে কীটনাশক রাসায়নিক স্প্রে’র পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, ছায়াগাছে আটকে রাখা ট্র্যাপের কোনটিতে বেশি পরিমাণ পোকামাকড় আটকাচ্ছে তা দেখে স্প্রে করার সময় ওই স্থানটির ওপরই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তৃতীয়ত, বাগানে কী কী ধরনের রোগপোকার প্রাদুর্ভাব রয়েছে সেটা বুঝে সেই মোতাবেক পদক্ষেপ করা যাচ্ছে। টিআরএ’র তরাই শাখার অ্যাডভাইজারি অফিসার ডঃ তৃণা মণ্ডলের কথায়, ‘দেখা গিয়েছে হলুদ ফাঁদ ব্যবহার করে কীটনাশক স্প্রে’র ব্যবহার এক থেকে দু’রাউন্ড কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। ফলে বেশি সংখ্যক উপকারী পোকা বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে। পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে ফাঁদে যে সমস্ত পতঙ্গ আটকা পড়ে সেগুলির শতকরা ৯৫ শতাংশই চায়ের পক্ষে ক্ষতিকর।’ চা বণিকসভা টি অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার (টাই) উত্তরবঙ্গ শাখার চেয়ারম্যান চিন্ময় ধর বলছেন, ‘হলুদ ফাঁদের ব্যবহার পরিবশবান্ধব একটি পদ্ধতি।’