প্রণব সূত্রধর, আলিপুরদুয়ার: চাকরি বাতিল (Teacher Recruitment Scam) হতেই একাধিক সমস্যার সম্মুখীন শিক্ষকরা। কেউ নতুন চাকরি পেয়ে সংসার পেতেছিলেন, কেউ বা ঋণ নিয়ে জিনিসপত্র কিনেছিলেন। একে তো দৈনন্দিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, তার ওপর লোকের ব্যঙ্গবিদ্রুপে তাঁদের মানসিক যন্ত্রণা বাড়ছে।
যেমন, আলিপুরদুয়ারে (Alipurduar) এক দম্পতির একইসঙ্গে চাকরি। নতুন সংসার পেতেছেন। সন্তান রয়েছে। বাড়িঘর তৈরির জন্য ঋণ নিয়েছেন। দুজনে চাকরি করতেন। ফলে সংসারের আর্থিক সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়নি। তবে চাকরি চলে যেতেই হতাশ হয়ে পড়েছেন। কারণ, তাঁদের পক্ষে নতুন করে পড়াশোনা করে ফের চাকরির প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব নয়। ফলে কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। সম্প্রতি নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির তরফে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। সেখানেও তাঁরা অংশ নিয়েছিলেন। ওই দম্পতির কথায়, ‘দিনরাত পড়াশোনা করে চাকরি পেয়েছি। এখন চাকরি যাওয়ার খবরে কী করব বুঝে উঠতে পারছি না। অনেকে বাঁকা নজরে দেখছেন, যা মানসিক যন্ত্রণা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।’
শহরের আরেক শিক্ষিকার পড়াশোনার মাঝে বিয়ে হয়ে যায়। পরবর্তীতে এক বছরের শিশুকে কোলে নিয়ে এসএসসি (SSC) পরীক্ষার প্রস্তুতি চলে। ভোররাতে উঠে পড়াশোনা করেছেন। স্কুল-কলেজের ফল ভালো ছিল। এমনকি চাকরির পরীক্ষাতেও সাফল্য পান। চাকরি পেয়েও যান। তারপর ব্যাংক ঋণ নিয়ে জিনিসপত্র কেনেন। এখন সেইসব ঋণ কীভাবে পরিশোধ করবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না। ওই শিক্ষিকার কথায়, ‘বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল ভালো ছিল। লিখিত পরীক্ষা ও ইন্টারভিউ ভালো দিয়েছি। ফলে সহজেই চাকরি পেয়ে যাই। এখন যোগ্য ও অযোগ্য মিলেমিশে একাকার। কিন্তু চাকরি চলে যাওয়ার খবর ছড়াতেই অনেকে হাসিঠাট্টা করছেন। একজন যোগ্য হয়েও এমন আচরণ সহ্য করতে হচ্ছে।’
আরেক শিক্ষকের বাড়িতে স্ত্রী, সন্তান সহ বৃদ্ধ বাবা, মা রয়েছেন। চাকরি চলে যাওয়ার খবর বাবা-মাকে এখনও বলেই উঠতে পারেননি তিনি। কী করে বলবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। ওই শিক্ষকের কথায়, ‘স্কুলে চাকরি করার ইচ্ছে ছিল। সেইভাবে পড়াশোনা করি। বাড়ির আর্থিক অবস্থা ততটা ভালো ছিল না। তবে চাকরি পাওয়ার পর কিছুটা হাল ফেরে। এখন চাকরি চলে যাওয়াটা পরিবারের লোকজন মেনে নিতে পারবেন না। তবে এখন আর বাজারঘাটে যেতে পারছি না। অনেকে কটূক্তি করছেন। এমনকি সামাজিক মাধ্যমেও কটূক্তি করতে কেউ ছাড়ছেন না।’
এই অবস্থায় নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক জয়ন্ত সাহা ও অখিল ভারতীয় রাষ্ট্রীয় শৈক্ষিক মহাসংঘের জেলা সম্পাদক পিরাজ কিরণ অবশ্য যোগ্য শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছেন।