সানি সরকার, শিলিগুড়ি: কোমরসমান জলে দাঁড়িয়ে কেউ ঘরের টিন খুলছেন। কেউ আবার গবাদিপশুকে কোলে তুলে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ করছেন। খিদের জ্বালায় শিশুগুলির কান্না পরিবেশকে আরও ভারী করে তুলেছে। সেবক (Sevoke) সংলগ্ন লালটংবস্তির এই ছবির কারণ তিস্তা (Teesta River)। দিনের শেষে দূরের মাঠে আশ্রয় নিতে পেরেছে পরিবারগুলি। কিন্তু খাবার জুটবে কীভাবে, বুঝে উঠতে পারছেন না কেউই। অভিযোগ, এই পরিস্থিতিতেও প্রশাসনিক মহল থেকে কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি।
জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) জেলা পরিষদের এই এলাকার সদস্য মনীষা রায়ের বক্তব্য, ‘তিস্তার জল আটকাতে দুই সপ্তাহ আগে পাঁচ হাজার বালির বস্তা দেওয়া হয়েছে। শুকনো খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। সমস্তটা জানানো হয়েছে সেচ দপ্তরকে। কিন্তু এদিনের ঘটনা আমাকে কেউ জানায়নি। নতুন করে কী করা যায়, সেটা দেখছি।’ বিজেপির সাংসদ এবং বিধায়করা কী করছেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। বিজেপি বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায় রাজ্য সরকারের দিকে দায় ঠেলে বলছেন, ‘নদীতে বাঁধ দেওয়ার বিষয়টি রাজ্য সরকারের। অক্টোবরের বন্যার পর আট মাস কেটে গেলেও রাজ্যের তরফে কিছু করা হয়নি। একজন বিধায়ক এবং জয়ন্তদার সাংসদ হিসেবে যা যা করার, সমস্তটাই করা হচ্ছে।’
সেবকের অতিবৃষ্টিতেও দিনকয়েক আগে জলবন্দি হয়ে পড়েছিলেন গ্রামবাসীরা। আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুসারে, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সেবকে বৃষ্টি হয়েছে ১০১.৪ মিলিমিটার। আর এই বৃষ্টিই বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে লালটংকে। ৪২টি পরিবারের বর্তমান ঠিকানা অদূরে বন দপ্তরের একটি ফাঁকা জমি। সাধারণত কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটলে, দুর্গতদের নিরাপদ আশ্রয় বা ত্রাণশিবিরে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে প্রশাসন। কিন্তু গ্রামবাসীদের অভিযোগ, প্রশাসন ভোটের বাইরে তাঁদের খোঁজ করে না।
জলে সমস্ত কাঠ ভিজে যাওয়ায় গ্রামবাসীরা উনুন জ্বালাতে পারছেন না। ফলে অভুক্ত অবস্থায় দিন কাটছে লালটংয়ের বাসিন্দাদের। পরিবেশপ্রেমী অমিতাভ বসু বলেন, ‘চরম অসহায় অবস্থায় দিন কাটছে সকলের। লালটংবস্তির পাশে সমাজসেবী সংগঠনগুলোর দাঁড়ানো উচিত।’ তাঁরা শুক্রবার ত্রাণসামগ্রী নিয়ে যাবেন বলে জানান সূর্যনগর সমাজকল্যাণ সংস্থার সুজিত বসাক।
জিতেন শৈব্য বলেন, ‘বুধবার দুপুর থেকে জল ঢোকা শুরু হয়। সময়ের সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। বৃহস্পতিবার সকালেও তা অব্যাহত ছিল।’ বনাঞ্চল ঘেরা এই এলাকার কৃষিকাজ এবং গবাদিপশুর প্রতিপালনের মধ্যে দিয়ে রুটিরুজি জোগাড় করেন গ্রামবাসীরা। জলের তলায় কৃষিজমি, জলের সঙ্গে প্রবেশ করেছে পলি। ফলে ভবিষ্যৎ নিয়েও আশঙ্কা শুক্রে ছেত্রীদের।