গাজোলঃ ব্যাপক পুলিশী প্রহরা এবং টানটান উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে এদিন শেষ হল বাবুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের কাজ। তৃণমূল এবং মহাজোট উভয়ের সদস্য সংখ্যা ৬-৬ হওয়ায় শেষ পর্যন্ত লটারির মাধ্যমে প্রধান এবং উপপ্রধান নির্বাচিত হয়। দুটি পদই গেছে তৃণমূলের অনুকূলে। বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তৃণমূলের জয়ী সদস্যদের পুলিশি প্রহরার মাধ্যমে পঞ্চায়েত অফিস থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে এদিনের ঘটনায় যথেষ্ট ক্ষুব্ধ মহাজোট এর সদস্যরা। লটারির মাধ্যমে গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করলেও আগামী দিনে তৃণমূলকে যে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে এদিন সে কথা পরিষ্কার করে দিয়েছে মহাজোটের জয়ী সদস্যরা।
বাবুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে মোট সদস্য সংখ্যা ১২। পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের দখলে যায় পাঁচটি আসন। বাকি সাতটি আসনের মধ্যে সিপিএম পায় তিনটি, কংগ্রেস দুটি, বিজেপি একটি এবং মহাজোট সমর্থিত নির্দল পায় একটি আসন। নির্দলের সমর্থন নিয়ে অংকের হিসেবে বোর্ড গঠনের কথা ছিল মহাজোটের। কিন্তু এরই মধ্যে সিপিআইএমের প্রতীকে নির্বাচিত সদস্য দিপালী বেসরা হঠাৎ করে যোগ দেয় তৃণমূল কংগ্রেসে। যদিও এলাকাবাসীর বক্তব্য দিপালী বেসরাকে অপহরণ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এ নিয়ে গাজোল থানায় ডেপুটেশন প্রদান করে ঝাড়খন্ড দিশম পার্টি। গত ১০ অগাস্ট বাবুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের কথা ছিল। দিপালী বেসরাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল আদিবাসী সহ এলাকার মানুষজনেরা। ওইদিন বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় বাবুপুর এলাকা। পুলিশের উপর চড়াও হয় স্থানীয় মানুষজনেরা। এরপর সেদিন দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত দফায় দফায় উত্তেজনা তৈরি হয়। গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস ঘিরে রাখে কয়েকশো মানুষ। সেদিনই বোর্ড গঠনের দাবি জানান তারা। অবশেষে রাতে জেলা থেকে আরও বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে লাঠিচার্জ করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে সরিয়ে দেওয়া হয়। সেদিনই প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয় ১৮ অগাস্ট বাবুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করা হবে।
বোর্ড গঠনকে ঘিরে যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য এদিন সকাল থেকেই এলাকার দখল নিয়েছিল পুলিশ। গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস সহ গোটা এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছিল কয়েকশো পুলিশ। বাবুপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ঢোকার আগে রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় বসানো হয়েছিল ড্রপ গেট। বাবুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সংশ্লিষ্ট ২০০ মিটার এলাকায় জারি করা হয়েছিল ১৪৪ ধারা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচিত সদস্যরা গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে চলে আসেন। কড়া পুলিশের প্রহরার মাধ্যমে নিয়ে আসা হয় দল বদলু দিপালী বেসরাকে। এরপর শুরু হয় বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া। ভোটাভুটির মাধ্যমে তৃণমূল এবং মহাজোট উভয়েই ছটি করে ভোট পায়। এরপর লটারির মাধ্যমে শুরু হয় প্রধান এবং উপপ্রধান নির্বাচনের কাজ। লটারির মাধ্যমে প্রধান নির্বাচিত হন তৃণমূলের রোজি সুলতানা পারভীন। উপপ্রধান নির্বাচিত হন সিপিএমের প্রতীকে নির্বাচিত পরে তৃণমূলে যোগদানকারী দিপালী বেসরা।
বোর্ড গঠনের পর পুলিশি নিরাপত্তায় বাইরে বের করা হয় তৃণমূলের জয়ী প্রার্থীদের। যদিও তাদের মধ্যে জয়ের তেমন কোন উচ্ছ্বাস দেখা যায়নি। বলতে গেলে প্রায় নীরবই ছিলেন দলবদলু দিপালী বেসরাও। নিরস মুখে তিনি শুধু বলেন নিজের ইচ্ছেতেই তিনি তৃণমূলে যোগদান করেছেন।
জোটের পক্ষে মল্লিকা রায় জানান, এদিন পুলিশ প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে অনৈতিকভাবে বোর্ড দখল করল তৃণমূল কংগ্রেস। গোপনে ভোট হলে হয়ত দিপালী আমাদেরকেই ভোট দিত। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ওর স্বামী এবং সন্তানকে নিজেদের হেফাজতে রেখেছে তৃণমূল কংগ্রেস। দিপালীকে চাপ দিয়ে নিজেদের পক্ষে ভোট দেওয়াতে বাধ্য করেছে। আমরাও সহজে ছেড়ে দেব না। প্রধান উপপ্রধান তৃণমূল দখল করলেও সংখ্যার বিচারে সঞ্চালক হবে আমাদেরই। তৃণমূলকে এখানে কোনওভাবেই দুর্নীতি করতে দেব না।
এদিন দুপুর থেকে এলাকায় ছিলেন বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু। তিনি জানান এলাকার মানুষের মতামতকে অগ্রাহ্য করে প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে বোর্ড গঠন করল তৃণমূল কংগ্রেস। তবে আমরাও সহজে ছেড়ে দেব না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে এলাকার মানুষদের নিয়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। বাবুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে এক টাকার ও দুর্নীতি করতে দেওয়া হবে না তৃণমূল কংগ্রেসকে।