শুভাশিস বসাক, ধূপগুড়ি: জলপাইগুড়ি জেলায় চলতি বছরে উৎপাদিত আলুর মাত্র ৪৮ শতাংশই হিমঘরে সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। আর সেক্ষেত্রে আলুর বন্ডের কালোবাজারি হওয়ার আশঙ্কায় বৃহস্পতিবার আগাম বৈঠক সারলেন জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা। মূলত ব্লক স্তরে কৃষি দপ্তর, ব্লক প্রশাসন ও কৃষি বিপণন দপ্তর, জনপ্রতিনিধি এবং হিমঘর কর্তৃপক্ষ নিয়ে বৈঠক হয়। চলতি বছর কালোবাজারি রুখে দিয়ে কৃষিকাজে যুক্ত কৃষকদের কীভাবে আলুর বন্ড দেওয়া যায় তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কৃষকবন্ধু, কিষান ক্রেডিট কার্ড দেখেই কৃষক প্রতি সর্বোচ্চ ৫০ প্যাকেট করে বন্ড দেওয়া হবে। এই ব্যাপোরে কৃষক বাবলু রায় বলেন, ‘সঠিক দাম না পেলে কৃষকরা আলু বিক্রি না করে তা হিমঘরে সংরক্ষণ করবেন। কিন্তু মাত্র ৫০ প্যাকেট হিসেব ধরলে তা অনেকটাই কম হবে। এতে কালোবাজারি বন্ধ করা সম্ভর হবে না।’
সাধারণত একশ্রেণির ব্যবসায়ী এই বন্ড নিয়ে কালোবাজারি করে বলে অভিযোগ তুলে এর আগে বহুবার রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন কৃষকরা। কিন্তু ওই বিক্ষোভ ছড়ানোর আগেই এবার জেলা প্রশাসন সতর্ক হয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ নিচ্ছে। অনেকেই বলছেন, কৃষকদের মাঝে ব্যবসায়ীরা ঢুকে বন্ডের দাবি করতেই সমস্যা বেড়ে যায়। এটা রুখতেই প্রশাসন এবার কৃষকদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলাজুড়ে ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। তার মধ্যে শুধুমাত্র ধূপগুড়িতে ১৫ হাজার হেক্টর চাষ হয়েছে। কিন্তু জেলায় যে ক’টি হিমঘর রয়েছে, তার ধারণক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদনের তুলনায় মাত্র ৪৮ শতাংশই হিমঘরে সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। বাকি আলু সংরক্ষণের জন্য জেলায় কোনও ব্যবস্থা নেই। এই ব্যবস্থা নেই বলেই কালোবাজারির একটা আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। কৃষকদের দাবি, যেভাবে সংরক্ষণ নীতি নেওয়া হয়েছে, তাতে সমস্যা মিটবে না। কৃষক আবু হানিফার কথায়, ‘মাত্র ৫০ প্যাকেট করে আলুর বন্ড দিলে সমস্যা মিটবে না। কারণ অনেক কৃষকই নিজস্ব চার-পাঁচ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। আলু ওঠার পর ৫০ প্যাকেট ব্যতীত বাকি আলু দাম না পেলে কৃষকরা কী করবেন?’
ইতিমধ্যে সহ কৃষি অধিকর্তা, কৃষি বিপণন আধিকারিক, বিডিও এবং জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। সেখানেই সমস্যা এবং সমাধান কীভাবে করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করা হয়। তবে পুরো প্রক্রিয়াটি জেলা শাসক শামা পারভীনের তৎপরতায় হচ্ছে। জেলা কৃষি বিপণন দপ্তরের আধিকারিক সুব্রত দে অবশ্য এই ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে দপ্তর সূত্রে খবর, জেলায় যে পরিমাণ আলু উৎপাদন হচ্ছে, তার তুলনায় হিমঘরের ধারণক্ষমতা অনেকটাই কম।
জলপাইগুড়ি জেলার উপকৃষি অধিকর্তা গোপালচন্দ্র সাহা বলেন, ‘জেলাজুড়ে ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। বাকি সংরক্ষণ এবং অন্যান্য বিষয়ে কৃষি বিপণন দপ্তর বলতে পারবে।’ প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলাজুড়ে হিমঘর অনুযায়ী হিসেব দেখলে ৩ লক্ষ ৯০ হাজার মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। তবে উৎপাদন তুলনামূলকভাবে অনেকটাই বেশি হয়েছে।