শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটা: চা শিল্পে আর্থিক সহযোগিতার পরিমাণ এক ধাক্কায় ৮২ শতাংশ বাড়িয়ে দিল কেন্দ্রীয় শিল্প বাণিজ্য মন্ত্রক (Ministry of Industry and Commerce)। ২০২৪-’২৫ এবং ২০২৫-’২৬ এই দুই অর্থবর্ষের জন্য বরাদ্দ ২৯০.৮১ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫২৮.৯৭ কোটি টাকা করার কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ‘টি ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড প্রোমোশন’ স্কিমে ওই টাকা খরচ করা হবে।
সংশ্লিষ্ট মহল জানাচ্ছে, আর্থিক সহযোগিতার একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে ক্ষুদ্র চা চাষ। এর ফলে খুশি ক্ষুদ্র চা চাষিরা। তাঁদের সর্বভারতীয় সংগঠন কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (সিস্টা) -এর সভাপতি ও জলপাইগুড়ি জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির সম্পাদক বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, ‘ক্ষুদ্র চা চাষের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বেশ কিছু পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছে। এতে আমরা সন্তুষ্ট। তবে কাঁচা পাটের মতো কাঁচা চা পাতারও ন্যূনতম সহায়কমূল্য ঘোষণা অত্যন্ত জরুরি। আশা করছি শিল্প বাণিজ্য মন্ত্রক এব্যাপারেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে। প্রথাগত চাষিদের জন্য যে ১০টি কেন্দ্রীয় প্রকল্প রয়েছে, তাতে ক্ষুদ্র চাষিদেরও অন্তর্ভুক্ত করার দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের।’ বড় চা বাগানগুলির ক্ষেত্রে সন্তোষজনক বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে পুরোনো গাছ উপড়ে ফেলে নতুন গাছ রোপণ বাবদ আর্থিক সহযোগিতার কথা। চা মালিকদের শীর্ষ মঞ্চ কনসালটেটিভ কমিটি অফ প্ল্যান্টেশন অ্যাসোসিয়েশন (সিসিপিএ) -এর উত্তরবঙ্গের আহ্বায়ক অমিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘টি বোর্ডের কাছ থেকে নানা খাতে ভরতুকি (Subsidy) বাবদ বাগানগুলির প্রচুর টাকা বকেয়া রয়েছে। সেটা যদি দিয়ে দেওয়া হয় তবে ধুঁকতে থাকা সংগঠিত ক্ষেত্রের চা শিল্প নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’
কেন্দ্রীয় সরকার ক্ষুদ্র চা চাষিদের নিয়ে আগামী দুটি আর্থিক বর্ষে ৮০০ নতুন স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও ৩৩০টি ফার্মার্স প্রোডিউসার্স ক্লাব গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য ১০৫.৫ কোটি টাকা আর্থিক সহযোগিতা করা হবে। ওই তহবিল দিয়ে ক্ষুদ্র চাষিদের উৎপাদনশীলতা ও কাঁচা পাতার গুণগতমান বৃদ্ধির ওপর কাজ হবে। রয়েছে ক্ষুদ্র চা চাষে প্রযুক্তির ব্যবহার, কাঁচা পাতা বহন করার গাড়ি ও প্রুনিং বা চা গাছ ছাঁটাইয়ের জন্য যন্ত্র ক্রয়, গুদাম তৈরি, মিনি টি ফ্যাক্টরি চালু ইত্যাদি বাবদ আর্থিক সহযোগিতার পরিকল্পনাও।
কেন্দ্রের নয়া সিদ্ধান্তে ৫০ বছরের বেশি বয়সি চা গাছ তুলে ফেলে ১ হাজার হেক্টর জমিতে নয়া রোপণের ক্ষেত্রে আর্থিক সহযোগিতার কথা রয়েছে। এছাড়া শ্রমিক কল্যাণে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি, বাগানের পড়ুয়াদের বৃত্তি প্রদানের প্রকল্প অব্যাহত রাখার কথাও বলা হয়েছে। কেন্দ্র জানিয়েছে, আর্থিক সহযোগিতার বরাদ্দ বাড়ানোর ফলে ঘরোয়া ও সেইসঙ্গে বিদেশের বাজারে দেশীয় চায়ের প্রচার ও প্রসার দুটোই বাড়বে।