উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ সাত বছর নিখোঁজ থাকার পর অন্তোষ্টী ক্রিয়া সম্পন্ন হয় এক সেনাকর্মীর। সেনাকর্মীর খোঁজ না পেয়ে সেনার তরফে একটি পুতুল দাহ করে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করে। বিষয়টি মেনে নেয় পরিবারের লোকেরাও। দীর্ঘ ২৪ বছর পর সেই সেনাকর্মীর খোঁজ মিলল কলকাতার কাছে ব্যারাকপুর সেনা ছাউনি সংলগ্ন এলাকায়। ভবঘুরের সেনাসুলভ আদবকায়দা তাঁকে দীর্ঘ ২৪ বছর পরে পরিবারের কাছে ফেরাতে সাহায্য করল।
জানা গিয়েছে, কলকাতার কাছে ব্যারাকপুরে সেনা ছাউনি সংলগ্ন এলাকায় আস্থানা ছিল এক বৃদ্ধ ভবঘুরের। হিন্দিভাষী এই ভবঘুরের মুখ ভর্তি দাড়ি-গোঁফ। কেউ কিছু বললে অল্পেই রেগে যেতেন। তবে কেউ খাবার দিলে তাঁর উদ্দেশে স্যালুট জানাতে ভুলতেন না এই ভবঘুরে। চলাফেরায় তাঁর সেনাসুলভ আদবকায়দার ছোঁয়া। স্মৃতি হারিয়ে বৃদ্ধ ব্যারাকপুরে পথবাসী হয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন। খাবার না জুটলে আঁস্তাকুড় ঘেঁটে উচ্ছিষ্টও কুড়িয়ে খেতেন।
সম্প্রতি, এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মী অম্বরীশ নাগ বিশ্বাসের নজরে আসে এই ভবঘুরে। বেশ কয়েকদিন ধরেই দুবেলা খাবার দিতেন তিনি। আর খাবার পেয়েই বৃদ্ধ ভবঘুরে তাঁকে স্যালুট দিতেন। আর এতেই সন্দেহ বেড়ে যায় এই সমাজকর্মীর। তিনি বলেন, “বৃদ্ধকে খাবার দেওয়ার সময়ে আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করতাম। এক দিন দেউড়িয়া জেলার কথা বললেন তিনি। মেয়ের নাম বলতেন অনিতা, উনি মেয়েকে সীতা নামেই ডাকতেন। ইন্টারনেটে খুঁজে দেখলাম, জেলার নামটা ঠিক। তবে সব চেয়ে বড় ক্লু ছিল, সেনাদের মতো ওঁর স্যালুট করার কায়দা।’’ ভবঘুরের মুখ থেকে জেলার নাম জানতে পেরেই খোঁজ খবর নিতেই পরিচয় বেড়িয়ে আসে ভবঘুরের। এরপরই সংগঠনের পক্ষ থেকে পুলিশের সাহায্য নিয়ে দীর্ঘ ২৪ বছর পর পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেন বৃদ্ধকে।
দীর্ঘ বহু বছর পর নিখোঁজ বাবাকে ফিরে পেয়ে যারপরনাই খুশি পরিবারের লোকেরা। জানা গিয়েছে এই ব্যক্তির নাম রাধে চৌরাসিয়া। বাড়ি উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের পাশে দেউড়িয়া জেলায়। বয়স তাঁর ৮০। রাধে অসমের তেজপুরে সেনাবাহিনীর এমইএস বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তাঁর ছেলে রাজকুমার বলেন, ‘‘তখন সালটা ১৯৯৯। সেই সময় টেলিফোনের ব্যবহার ততটা ছিল না। বাবা ছুটিতে আসার আগে চিঠি পাঠাতেন। ওই বছর জানুয়ারিতে বাবা আসবেন বলে চিঠি এল। কিন্তু বাবা এলেন না। আমরা ভাবলাম, হয়তো ছুটি বাতিল হয়ে গিয়েছে। পরে সেনাবাহিনীর তরফ থেকে চিঠি এল যে, বাবা ছুটি নিয়ে তার পরে আর কাজে যোগ দেননি। তারপর থেকে বহু খোঁজ করার পরও খোঁজ মেলেনি। সাত বছর নিখোঁজ থাকার পর ২০০৬ সালে সেনাবাহিনীর নিয়ম মেনে একটা পুতুলকে বাবা ভেবে তাঁর পারলৌকিক কাজ করা হয়। মা জীবিত থাকলে খুব খুশি হতেন। স্বামীর দেহ না দেখলেও বছর ১৭ আগে মাকে মেনে নিতে হয়েছিল যে, তিনি জীবিত নেই। বাবা জীবিত থাকলেও মা শেষ জীবনে স্বামীর মৃত্যুশোক বয়ে বেড়িয়েছেন।’’