নাগরাকাটাঃ দেহ সৎকার করতে এসে প্রবল জলোচ্ছাসের ফলে ভেসে গেল জ্বালানী কাঠ। বৃহস্পতিবার বিকেলে এমনই ঘটনা ঘটে ডুয়ার্সের হোপ চা বাগান লাগোয়া থালখোলা নদীতে। ফুলে ফেঁপে ওঠা নদীতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নেমে সেই কাঠ উদ্ধার করে পরে সৎকারের কাজ হয়। সব মিলিয়ে গত দু দিন ধরে হড়পা বাণের জেরে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে নদী লাগোয়া নানা স্থানে।
জানা গিয়েছে, হোপ চা বাগান লাগোয়া থালখোলা নদীতে বছর উনিশের যে যুবকের দেহ সৎকার করতে আনা হয়েছিল তাঁর নাম অর্জুন গাদোয়া। বাড়ি ওই বাগানটির ধর্মা লাইনে। ছেলেটি বেঙ্গালুরুতে কাজ করতো। গত ৩ অগাস্ট বাগানের একই শ্রমিক মহল্লার আরো দুই যুবক অবিনাশ পর্জা ও আব্রাহাম নায়েক সহ অর্জুন সেখানে একটি সড়ক দূর্ঘটনার কবলে পড়েন। ১২ অগাস্ট বেঙ্গালুরুতেই মারা যান অবিনাশ। তাঁর অন্ত্যোষ্টি সেখানেই হয়। চিকিৎসার টাকা যোগাড় করতে না পেরে অর্জুনকে অ্যাম্বুলেন্সে করে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে ভরতির জন্য নিয়ে আসছিলেন বাড়ির লোকেরা। পথে আরও অসুস্থ পড়লে তাঁকে ওডিশার ভুবনেশ্বরের একটি হাসপাতালে ভরতি করা হয়। ২৩ অগাস্ট সেখানে মৃত্যু হয় ওই যুবকের। ২৪ তারিখ দেহ বাড়িতে নিয়ে আসলে সৎকারের জন্য নদীতে নিয়ে গেলে ফের আরেক দফার বিপর্যয় ঘটে।
বর্তমানে ডুয়ার্সের পাহাড়ি নদীতে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারনে মাঝে মাঝেই হড়পা বান হচ্ছে। হোপ চা বাগানের যে শ্মশান ঘাটে অর্জুনের দেহ নিয়ে আসা হয় সেখানে একটি চুল্লি তৈরি করা থাকলেও বর্তমানে সেটি ব্যবহারের অযোগ্য। প্রায় পুরো পরিকাঠামোই বেহাল হয়ে আছে। ফলে নদীর আশপাশেই সৎকার করতে হয়। এদিন অর্জুনের দেহ সৎকারের জন্য চিতা সাজানোর সময় আচমকাই জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যায় জ্বালানীর কাঠ। কোনওক্রমে স্থানীয়রা নদীতে ঝাঁপিয়ে কাঠ উদ্ধার করে পরে শেষকৃত্য হয় মৃতের।
কিশোর গোয়ালা নামে হোপ চা বাগানের এক শ্রমিক নেতা বলেন, চুল্লির পরিকাঠামো যদি ঠিক থাকতো তবে এমনটা হত না। ভাগ্য ভাল নদীর মতিগতি আঁচ করে দেহ চুল্লির শেডের নীচেই রেখে দেওয়া হয়েছিল। এলাকার সঞ্জীব তামাং, সমিত পর্জার মতো বাসিন্দারা বলেন, উত্তাল নদী থেকে জ্বালানী কাঠ উদ্ধার করে পরে বহু কষ্টে দেহ সৎকার করা হয়। চুল্লিটি দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন। নাগরাকাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সঞ্জয় কুজুর বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। এব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।