নয়াদিল্লিঃ আসন সমঝোতা এখনও বিশ বাঁও জলে। সবে মাত্র প্রারম্ভিক বার্তালাপ শুরু৷ এর মধ্যে বুধবার সন্ধ্যেবেলায় এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পাওয়ারের দিল্লির বাসভবনে বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের কো- অর্ডিনেশন কমিটির প্রথম বৈঠকেই চূড়ান্ত হল, অক্টোবরে প্রথম সপ্তাহে শিবরাজ সিং চৌহানের রাজ্য মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালে সঙ্ঘবদ্ধ জনসভা আয়োজিত হবে, যেখানে হাজির হয়ে ভোটমুখী রাজ্য তথা বিজেপির গড় মধ্যপ্রদেশে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় শাসকদল ও তার শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কামান দাগবেন ইন্ডিয়া জোটের শীর্ষ প্রতিনিধিরা। একইসাথে ইডির জেরা সামলাতে বৈঠকে উপস্থিত থাকতে না পারায়, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এবং ডায়মন্ড হারবার সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়ে সহমর্মিতার হাত বাড়ালেন ইন্ডিয়া জোট প্রতিনিধিরা।
বুধবার এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ারের দিল্লির বাসভবনে মিলিত হলেন কো অর্ডিনেশন কমিটি অন্তর্ভুক্ত ১২ টি বিরোধী রাজনৈতিক দলের শীর্ষ প্রতিনিধিরা। শরদ পাওয়ার-সহ কংগ্রেসের কে সি বেণুগোপাল, ডিএমকে নেতা টি আর বালু, আরজেডি-র তেজস্বী যাদব, শিবসেনার সঞ্জয় রাউত, জেডিইউ’র সঞ্জয় ঝাঁ, ‘আপ’-এর সাংসদ রাঘব চাড্ডা, সিপিআই নেতা ডি রাজা সহ বহু বিশিষ্টজনেরা। কলকাতায় ইডি অফিসে জেরায় হাজিরা দেওয়ার জন্য দিল্লির বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেননি তৃণমূল কংগ্রেস সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রের তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এদিন তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, একবাক্যে অভিষেকের পাশে দাঁড়িয়েছে বিরোধী ইন্ডিয়া শিবির৷ প্রায় আড়াই ঘন্টার বৈঠকের শেষে, বিজেপি তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ইন্ডিয়া জোটের সমন্বয় কমিটির অন্যতম সদস্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিল্লিতে বৈঠকের দিনেই জেরা করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট, এমনটাই দাবি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র। গোটা বিষয়টি ‘দূর্ভাগ্যজনক’ ও ‘নিন্দনীয়’ বলে দাবি করেছেন উপস্থিত অধিকাংশ নেতারা।
উল্লেখ্য, দলের তরফে অভিষেকের অনুপস্থিতির কারণ আগেই জানানো হয়েছিল ইন্ডিয়া জোটের সদস্য প্রথমসারির নেতাদেরকে৷ এরপরেই জোট তরফে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সবাই একজোট হয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়ানো হবে এবং গেরুয়া শিবিরের তথাকথিত রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক আচরণের তীব্র সমালোচনা করা হবে৷ এই সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে এদিনের সমন্বয় কমিটি বৈঠকে অভিষেকের জন্য একটি নির্দিষ্ট চেয়ার ‘ফাঁকা’ রাখা হয়, জানানো হয় এটি প্রতীকী প্রতিবাদ৷ সমন্বয় কমিটির বৈঠকের পরে শরদ পাওয়ারের বাড়িতে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে যৌথ বিবৃতি জারি করে ইন্ডিয়া জোট৷ এই বিবৃতিতে অভিষেকের ইডি জেরার প্রসঙ্গ তুলে ধরে সমন্বয় কমিটির সদস্য, কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কে সি বেণুগোপাল বলেন, ‘তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এদিনের বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেননি বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক প্রতিহিংসাজনিত ইডির সমনের জন্য৷’
নয়াদিল্লিতে বিরোধী জোট সূত্রে খবর, বুধবার এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পাওয়ারের বাসভবনে আয়োজিত সমন্বয় কমিটির প্রথম বৈঠকের আলোচনার শুরুতেই ইডি জেরার প্রসঙ্গ উঠে আসে৷ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সিপিএম এই কমিটিতে তাদের কোনও সদস্য পাঠায়নি৷ বৈঠকে হাজির বাকি ১২ জন সদস্যই সমন্বয় কমিটির বৈঠকের দিনে অভিষেককে ইডির জেরার বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হন৷ সূত্রের দাবি, জোটের এক সদস্য বলেন, আগামী দিনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা আরও বাড়বে। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে দিয়ে বিরোধী নেতাদের আরও বেশি হেনস্থার চেষ্টা করা হবে৷ তাই প্রস্তুত থাকতে হবে সবাইকে। বিজেপির রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক এই অভিসন্ধির সঙ্গে সম্মিলিতভাবে লড়াই করবে ইন্ডিয়া জোট, একযোগে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ইন্ডিয়া জোটের সমন্বয় কমিটি৷
তাত্পর্যপূর্ণ হল, এদিনের বৈঠকে সিপিএম এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মত দুটি দলের প্রতিনিধিদের অনুপস্থিতিতে জোটের সমন্বয় কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দ্রুত আসন ভাগাভাগি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করবে জোটের সদস্যরা৷ যত দ্রুত সম্ভব এই কাজ শেষ করা হবে বলে দাবি করেন ইন্ডিয়া জোটের সদস্য কংগ্রেস নেতা কে সি বেণুগোপাল৷ একইসঙ্গে কমিটির বৈঠকে এদিন সিদ্ধান্ত হয়েছে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ভোপালে একটি যৌথ জনসভা করবে ইন্ডিয়া জোট৷ বেকারত্ব, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং বিজেপির তথাকথিত দুর্নীতির ইস্যু গুলিকেই যে তাঁরা হাতিয়ার করবেন সেই সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে এদিনের বৈঠকেই৷ এর পাশাপাশি জাতিভিত্তিক জনগণনার দাবিতে যে তাঁরা এগোবেন সেই বিষয়টিতেও একমত হয়েছে ইন্ডিয়া জোটের সমন্বয় কমিটি৷ সূত্রের দাবি, তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্মীয়করণে নিষেধাজ্ঞার কথা নজরে রেখেই, বুধবার দিল্লিতে ইন্ডিয়া জোটের সমন্বয় কমিটির বৈঠকেও এই ইস্যুতে আলোচনা করে এগোনোর কথা চূড়ান্ত করে টিম ইন্ডিয়া সমন্বয় কমিটি৷