উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার মৃত্যুর ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে গোটা রাজ্যে। যাদবপুরের ঘটনায় এবার নতুন করে রহস্যদানা বেঁধেছে একটি চিঠিকে কেন্দ্র করে। মৃত ছাত্র হস্টেলের যে ঘরে ছিল, সেই ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছে মৃত ছাত্রের লেখা একটা চিঠি। অভিযোগ, ওই পড়ুয়াকে দিয়ে সেই চিঠিটি জোর করে লিখিয়ে নেওয়া হয়েছিল। যদিও সেই চিঠির হাতের লেখা এবং নীচের সইটি মৃত ছাত্রের কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে খবর পুলিশ সূত্রে।
জানা গিয়েছে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের যে ঘরে অতিথি হিসেবে থাকছিলেন স্বপ্নদীপ সেই ঘর থেকে একটি ডায়েরি উদ্ধার করেছে পুলিশের তদন্তকারী দল। চিঠিটি উদ্ধার হওয়া ডায়েরির পাতায় লেখা হয়েছে বলে দাবি। সরকারি আইনজীবী সৌরীন ঘোষাল সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘‘একটি চিঠি পাওয়া গিয়েছে। সেটি জোর করে লেখানো হয়েছিল। চিঠিটি লেখানোর ক্ষেত্রে ধৃতদের হাত থাকতে পারে।”
কী লেখা রয়েছে চিঠিতে? জানা গিয়েছে, চিঠিটি লেখা হয়েছে ‘ডিন অফ স্টুডেন্টস’কে। সেই চিঠিতে বিভাগীয় সিনিয়রদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ লেখা হয়েছে। অভিযোগ তোলা হয়েছে যে, বিভাগীয় সিনিয়রেরা হস্টেলের পরিবেশ নিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছেন। চিঠিতে এক জনের নামও নেওয়া হয়েছে। তিনিই প্রথম বর্ষের পড়ুয়াকে ‘ভয় দেখানোর’ চেষ্টা করছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে চিঠিতে। ডিনকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করার আর্জিও চিঠিতে জানানো হয়েছে।
এদিকে এই চিঠিটি মৃত ছাত্রের নয় বলে দাবি করেছেন পরিবারের লোকেরা। পরিবারের দাবি, এই চিঠির হাতের লেখা তার নয়। মৃত পড়ুয়ার মামা স্বরূপ কুণ্ডু বলেন, ‘‘চিঠিটা আমি দেখেছি। ওই হাতের লেখা যে ওর নয়, এ ব্যাপারে আমি ১০০ শতাংশ নিশ্চিত। আমাদের দাবি, হস্টেলে যারা থাকে, সকলের হাতের লেখা পরীক্ষা করা হোক। তা হলেই বোঝা যাবে, চিঠিটা কে বা কারা লিখেছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমাদের মনে হয়, তদন্তকে প্রভাবিত করার জন্যই এই চিঠি ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’
মৃত ছাত্রের ঘর থেকে উদ্ধার হওয়া রহস্যজনক চিঠিটি নিয়ে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু প্রশ্ন সামনে এসেছে, যা ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। চিঠিতে তারিখ রয়েছে ১০ অগাস্ট। অথচ ৯ অগাস্ট রাতে হস্টেলের তিন তলার নীচ থেকে গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার হয় পড়ুয়া। এর পর ১০ তারখ ভোরে হাসপাতালেই মারা যান তিনি। তাহলে সে চিঠিটি লিখল কীভাবে? তা ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। চিঠিটির শেষে মৃত পড়ুয়ার নামে দু’টি সই কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। শুধু তা-ই নয়, সাদা কাগজে না লিখে কেন ডায়েরির পাতায় লেখা হল? এই প্রশ্নেরও উত্তরের খোঁজে তদন্তকারীরা।
বিষয়টি নিয়ে পুলিশ মৃতের বাড়িতে গিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারীরা। সেখান থেকে ছাত্রের হাতে লেখা রয়েছে দুটি খাতাও সংগ্রহ করেছেন তারা। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, উদ্ধার হওয়া ডায়েরির পাতায় চিঠির পাশাপাশি প্রথম বর্ষের ওই পড়ুয়ার একাধিক সইও মিলেছে। হাতের লেখা বিশারদকে দিয়ে সেগুলি পরীক্ষা করে দেখা হবে বলে খবর পুলিশ সূত্রে। যদি চিঠিটি পড়ুয়ারই হয়ে থাকে, তা হলে তাঁকে ওই চিঠি লিখতে বাধ্য করা হয়েছিল কি না, তা-ও ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা চলছে। যদি সত্যিই তাকে দিয়ে জোর করে চিঠি লেখানো হয়ে থাকে, তা হলে তার পিছনে উদ্দেশ্য কী ছিল? এই প্রশ্নও ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের।