কৌশিক দাস,ক্রান্তি: রয়েছে স্কুল। রয়েছেন একমাত্র শিক্ষকও। কিন্তু কোনও কারণে তিনি না থাকলে লাটে ওঠে পড়াশোনা। সেদিন স্কুলে অঘোষিত ছুটি। বর্তমানে এমনই হাল জলপাইগুড়ির ক্রান্তি ব্লকের গোলাবাড়ি জুনিয়ার হাইস্কুলের। ঘটনায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের সেখান থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে অন্য স্কুলে ভর্তি করাচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে এখানে কোনও শিক্ষক নিয়োগ না করায় স্কুলটির ভবিষ্যৎ নিয়ে রীতিমতো প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
এক সময় তিনশোর বেশি পড়ুয়া নিয়ে স্কুলটি রমরমিয়ে চলত। যদিও জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে কোনওদিনই এখানে পর্যাপ্ত শিক্ষক ছিলেন না। বর্তমানে শিক্ষক না থাকায় অর্ধেকের বেশি পড়ুয়া অন্যত্র চলে গিয়েছে। অবশিষ্ট পড়ুয়াদের অভিভাবকরাও চান না শিক্ষকের অভাবে ধুঁকতে থাকা বিদ্যালয়ে তাঁদের সন্তানরা পড়াশোনা করুক। পুরোনো শ্রেণিকক্ষগুলিই যখন পড়ুয়ার অভাবে খাঁ খাঁ করছে তখন সম্প্রতি ওই বিদ্যালয়ে দুটি নতুন শ্রেণিকক্ষ তৈরি করা হয়েছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক না থাকায় চলতি শিক্ষাবর্ষে চারটি শ্রেণির পঠনপাঠন কীভাবে সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অভিভাবক সহ স্থানীয় বাসিন্দারা। একদা পড়ুয়াদের কোলাহলে মুখরিত ক্রান্তি ব্লকের গোলাবাড়ি জুনিয়ার হাইস্কুল নিয়ে সবাই হতাশ। স্কুলের এমন দশার জন্য রাজ্য প্রশাসন ও শিক্ষা দপ্তরকে কাঠগড়ায় তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
বিদ্যালয়ের একমাত্র প্রধান শিক্ষক বা সহ শিক্ষক যাই বলা হোক না কেন সেই মৃন্ময় মণ্ডল জানান, শিক্ষকের ঘাটতির কথা বহুবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও ফল মেলেনি। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) বালিকা গোলে দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন মাত্র। চ্যাংমারি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান আব্দুল সামাদ বলেন, ‘জুনিয়ার হাইস্কুলের শিক্ষক সমস্যা সমাধানে খুব তাড়াতাড়ি উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
স্থানীয় সূত্রে খবর, ক’বছর আগেও এখানে তিনশোর বেশি পড়ুয়া ছিল। জন্মলগ্নেই স্কুলে ছ’জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও ছিলেন মাত্র তিনজন। বছর দুয়েক আগে হঠাৎ-ই সেখান থেকে দুজন অন্যত্র বদলি হন। তাঁরা চলে যেতেই পড়ুয়ার সংখ্যা কমতে থাকে। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি অবধি চারটি ক্লাসের পঠনপাঠন থেকে শুরু করে স্কুলের অন্য সব দায়িত্ব মেটানো স্বাভাবিকভাবেই একমাত্র শিক্ষকের পক্ষে অসম্ভব। শিক্ষকের অভাবে বাধ্য হয়ে মাঝেমধ্যে চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মীকে ক্লাস নিতে হয়। শিক্ষক নিয়োগ না করেই তাঁদের বদলির যৌক্তিকতা ও শিক্ষা দপ্তরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। একই অভিযোগ স্থানীয় অমল রায়, নিশীথ রায়, পতিত রায়দের।
অভিভাবক রবিউল ইসলামের কথায়, ‘শিক্ষকহীন স্কুলে সন্তানদের রেখে লাভ কী? বিজ্ঞান, অঙ্ক , ইংরেজির ক্লাস একজনের পক্ষে নেওয়া কি সম্ভব?’ অন্য অভিভাবক বিশ্বজিৎ মণ্ডলের প্রশ্ন, একজন শিক্ষক কীভাবে ক্লাস নেবেন, অফিশিয়াল কাজকর্ম চালাবেন?