শিলিগুড়ি: প্রতি রাতেই কাওয়াখালি উপনগরী এলাকা থেকে ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ চুরি হচ্ছে। দুষ্কৃতীরা কোনও রাতে পুরো বাতিস্তম্ভই তুলে নিয়ে যাচ্ছে, কোনও রাতে দামি তার কেটে, আবার কোনওদিন বাতিস্তম্ভের একাংশ কেটে নিচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিদিন কিছু দুষ্কৃতী এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এখানে মদ, জুয়ার ঠেক বসিয়ে রাতভর অত্যাচার করছে।
শিলিগুড়ি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘ঘটনার তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’ শিলিগুড়ি–জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এসজেডিএ) চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘সরকারি অর্থে ওই ত্রিফলা বসানো হয়নি। যে সংস্থা সেগুলি বসিয়েছিল পরবর্তীতে সেই সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত হয়। আমরা সংস্থাকে বাতিস্তম্ভ বাবদ দেওয়া দুই কোটি টাকা ফেরত নিয়ে নিয়েছি।’
উপনগরী তৈরির কাজ শুরু হতেই কাওয়াখালিতে প্রচুর মানুষের বসতিও গড়ে উঠছে। এসজেডিএ’র অধিগৃহীত এলাকায় পুনর্বাসনপ্রাপ্ত এলাকায় রাস্তা এবং বিদ্যুৎ পরিষেবাও দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি রাস্তায় দীর্ঘদিন আগেই ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ বসানো হয়েছে। কিন্তু এই ত্রিফলাকে ঘিরে দুর্নীতির জেরে পুরো প্রকল্পই সেই সময় মুখ থুবড়ে পড়ে। ফলে কাওয়াখালিতেও ত্রিফলায় বাতি জ্বলেনি। এখন এই বাতিস্তম্ভগুলি রাতের অন্ধকারে চুরি হয়ে যাচ্ছে। কাওয়াখালি, বিধানপল্লি, সুশ্রুতনগর এলাকার বাসিন্দারা বলেছেন, এগুলি চুরি করে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে সেই টাকায় কিছু লোক মদের নেশা করছে। রোজ রাতে এলাকায় এসে হুজ্জতি করছে। যেখানেই ফাঁকা জমি রয়েছে, রাত হলে সেখানেই মদ, জুয়ার আসর বসছে। মাঝেমধ্যে পুলিশের গাড়ি এসে ঘুরে যায় ঠিকই, কিন্তু বহিরাগতদের অত্যাচার কমছে না বলে বাসিন্দারা দাবি করেছেন।
এদিন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, এসজেডিএ’র বসানো ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ তুলে অনেকেই বাড়ির পাশের জমির দু’পাশে পুঁতে দড়ি টাঙিয়ে সেখানে কাপড় শুকোতে দিয়েছেন। কোনও মাঠে আবার ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ দিয়ে গোলপোস্ট তৈরি করা হয়েছে। অনেক রাস্তার ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ পুরোপুরি উধাও হয়ে গিয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে আবার একাংশ কেটে নিয়ে গিয়েছে। দুষ্কৃতীরা সিংহভাগ বাতিস্তম্ভ থেকেই দামি বৈদ্যুতিক তার বের করে নিয়ে গিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রেবা সরকার, দোলন পাল, মন্টু মণ্ডলরা বললেন, ‘৮–১০ বছর ধরে এই ত্রিফলাগুলি এভাবেই এখানে পড়ে রয়েছে। এগুলো বসানোর সময় ভেবেছিলাম, পাড়ার রাস্তাগুলি আলো হবে, ভালোই হবে। কিন্তু বাতিস্তম্ভই পোঁতা হল, আলো আর জ্বলল না। এখন বাতিস্তম্ভগুলি চুরি হয়ে যাচ্ছে। সরকারের কোনও নজর নেই।’