বিদেশ বসু, মালবাজার: ওঁদের প্রেমে কোনও বাণী নেই। ভাষাও নেই। শুধু স্পর্শটুকু আছে। আর আছে অনুভূতি ও অমোঘ ভালোবাসা। এই স্পর্শ, ভালোবাসা ও দেখাকে সম্বল করেই গাঁটছড়ায় বাঁধা পড়লেন মালবাজারের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের দুই মূক ও বধির যুবক-যুবতী, মদন সিংহ ও পূর্ণিমা রায়।
পাঁচ দশক আগে জয়া ভাদুড়ি, সঞ্জীব কুমারের ‘কোশিশ’ সিনেমাটা এখনও অনেকের মনে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। সেখানে ওঁরা দু’জনেই ছিলেন মূক ও বধির। সেই পুরোনো দিনের সিনেমাই যেন ফিরে এল মালবাজারে। মদন-পূর্ণিমার সদ্য বিয়ে হয়েছে। মাল উদ্যানে ঘুরতে গিয়েছিলেন দু’জন। সঙ্গে পরিবারের কয়েকজন ছিলেন। উদ্যানের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত হাঁটলেন হাতে হাত রেখে। ওঁরা জন্ম থেকেই বিশেষভাবে সক্ষম। একই ওয়ার্ডেই বাড়ি। তবে ভিন্ন এলাকা। ছেলেবেলায় এক সময় শহরের স্টেশন রোডে বিশেষভাবে সক্ষমদের বিদ্যালয়ে দেখা হত। পরে যে তাঁরা চিরজীবনের সঙ্গী হবেন সে সময় তা জানা ছিল না। শৈশব থেকে আজ পর্যন্ত জীবনে ওঁদের সংগ্রামও কম করতে হয়নি। স্থানীয় যুবক সুভাষ বোস (মিঠুন )উদ্যোগ নিয়ে সম্প্রতি দু’জনের ঘটকালী করেন। পূর্ণিমা সেলাই এবং বাড়ির কাজকর্ম ভালোই জানেন। পূর্ণিমার মা সনকা রায় গৃহবধূ। বাবা সুরেশ রায় বৃদ্ধ শ্রমজীবী। আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবার।
সনকাদেবী বললেন, ‘শৈশবেই আমরা বুঝতে পারি ও মূক-বধির। চিকিৎসাও করি। লাভ হয়নি। জীবনে অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়েই ওকে বড় হতে হয়েছে। এখন ও শ্বশুরবাড়ি চলে গিয়েছে। ঘরটা ফাঁকা লাগে।’ তেরো নম্বর ওয়ার্ডের একেবারে শেষ প্রান্তে সিংহ পরিবারের বাড়ি। পরিবারের এক ছেলে মদন সিংহও জন্ম থেকেই মূক-বধির। সিংহ পরিবারের কৃষিজমি আছে। মদন সেখানে চাষাবাস করেন। পাশাপাশি যখন যা কাজ জোটে তাও করেন। অনেকদিন ধরেই মদনের জন্যও সম্বন্ধ দেখা হচ্ছিল। শেষে বাড়ির কাছেই জীবনসঙ্গিনী খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়েছে। মদনের মা শেফালী সিংহ বলেন, ‘ওদের মঙ্গল হোক।’ ঘটখালী করা স্থানীয় যুবক সুভাষ বোস ( মিঠুন) বলেন, ‘আমি দুই পরিবারকেই চিনতাম। শেষ পর্যন্ত ওঁদের এক করতে পেরে ভালোই লাগছে।’