প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লিঃ আবারও দলকে বিড়ম্বনায় ফেললেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর। আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে দলের তরফে অনুমোদিত জওহরলাল নেহেরুর অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শাসনকালকেও বর্তমান সময়ে বিশ্বব্যাপী যোগ চর্চার ‘জনপ্রিয়তা’র জন্য দরাজ সার্টিফিকেট দিলেন তিরুবনন্তপুরমের কংগ্রেস সাংসদ, যা নিয়ে রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়ল দেশের শতাব্দী প্রাচিন দল কংগ্রেস। কিন্তু ঠিক কী কাণ্ড বাধালেন শশী?
বুধবার আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের সকালে কংগ্রেসের তরফে ‘শীর্ষাসন’ রত দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর একটি ছবি টুইটে পোস্ট করে বলা হয়, ‘আজকের বিশেষ দিনে আমাদের পণ্ডিত নেহেরুকেও স্মরণ করা উচিত। তিনি যোগের জনপ্রিয়তায় অনবদ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন। যোগকে জাতীয় নীতির অন্তর্ভুক্তও করেন তিনি। নেহেরুর এই অবদান অকুণ্ঠ প্রশংসার প্রাপ্য।’ নিজের দলের সেই টুইটটিকে রিটুইট করে একপ্রকার উলটো কথা বলে দেন শশী থারুর। তাতেই যত জল্পনা। তিনি মন্তব্য করেন – ‘নি:সন্দেহে, এতে কোনও দ্বিমত নেই। তবে যারা যোগকে নতুন রূপ দিয়েছে তথা যোগকে আন্তর্জাতিক স্তরে জনপ্রিয় করেছে, সেই ভারত সরকার, প্রধানমন্ত্রী এবং বিদেশ মন্ত্রককেও এই কৃতিত্ব দেওয়া উচিত।’ থারুরের দাবি, ‘কয়েক দশক ধরেই বলে আসছি, যোগ আমাদের শক্তি, আর আমরা যে সেটা বুঝতে পারছি, এটাই ভাল দিক।’ দলীয় সাংসদ শশী থারুরের এহেন অপ্রিয় সত্যভাষণে রীতিমত মুখ চুন কংগ্রেসের। অন্য দিকে, থারুরের মন্তব্যকে হাতিয়ার করে মোদী প্রশস্তিতে আসরে নামতে দেরী করেননি গেরুয়া শিবিরের প্রতিনিধিরা। গোটা ঘটনায় দলের অভ্যন্তরেই উষ্মাপ্রকাশ করেছেন কংগ্রেসের একাধিক বর্ষীয়ান নেতারা, দাবি দলীয় সূত্রে।
প্রসঙ্গত, বিশ্বজুড়ে যোগ ও আসনের জনপ্রিয়তাকে চরম শীর্ষে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অবদান কোনও ভাবেই অস্বীকার করা যায় না। অন্যান্যদের মতো সে কথা মেনেছেন শশী থারুরও। তবে এক্ষেত্রে থারুর যেভাবে প্রকাশ্যে দলের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, ‘যোগ মাহাত্ম্য’ দরাজ হস্তে ভাগ করেছেন নেহেরু ও মোদির মধ্যে, সেটা আরও তাৎপর্যপূর্ণ। বস্তুত, কংগ্রেস শিবিরে প্রথমসারির বিক্ষুব্ধদের মধ্যে অন্যতম শশী থারুর বরাবরই স্রোতের বিরুদ্ধে হাঁটা মানুষ। অতীতে একাধিক বিষয়ে দলীয় অবস্থানের বিরুদ্ধাচারণ করেছেন তিনি। বিক্ষুব্ধ জি-২৩ গোষ্ঠীর অন্যতম সক্রিয় প্রতিনিধি তিনি। তবে কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনে মল্লিকার্জুন খড়গের কাছে পরাজয়ের পর থেকে দলে একপ্রকার ব্রাত্য থারুর। কার্যত এর পরেই সাম্প্রতিক কালে একাধিক ইস্যুতে তিনি দলীয় নীতির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে কড়া সমালোচনা করেছেন। যোগ দিবসেও খানিকটা তেমনই সুর শোনা গেল শশীর কণ্ঠে, ২০২৪ লোকসভার আগে যা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ।