Friday, May 3, 2024
Homeকলামজোট গড়তে আন্তরিকতা ছিল না শরিকদের 

জোট গড়তে আন্তরিকতা ছিল না শরিকদের 

  • রন্তিদেব সেনগুপ্ত

বিহারের নীতীশ কুমার আবার লালুপ্রসাদের হাত ছেড়েই দিলেন। আবার তিনি বিজেপির হাত ধরছেন। পুরোনো ইতিহাস ভুলে বিজেপিও নীতীশকে সাগ্রহে বরণ করতে বসে। নীতীশ যে এই প্রথম বিজেপির সঙ্গে ঘর করতে যাচ্ছেন ব্যাপারটা এমন নয়। বরং নীতীশ কতবার তাঁর রাজনৈতিক সঙ্গী পালটেছেন সে হিসাব রাখাও দুষ্কর।

আবার বঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করে দিয়েছেন, নির্বাচনে তিনি একাই লড়বেন। রাজ্যে ইন্ডিয়া জোটের অস্তিত্বই তিনি অস্বীকার করছেন। পালটা অধীর চৌধুরী নিত্যদিন মমতাকে ‘বিজেপির এজেন্ট’ আখ্যায় ভূষিত করে চলেছেন। পঞ্জাবে আম আদমি পার্টিও কংগ্রেসের চাহিদামতো আসন ছাড়তে রাজি নয়। সেখানে আপ একাই চলবে। উত্তরপ্রদেশেও সমাজবাদী পার্টি কংগ্রেসের হাত ধরতে পারছে না। মহারাষ্ট্রের উদ্ধব ঠাকরেও কংগ্রেসের বায়নাকে আমল দিতে রাজি নন। কেরলে সিপিএম প্রথমাবধি ঘোষণা করে আসছে ইন্ডিয়া জোটে থাকলেও রাজ্যে রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণেই কংগ্রেসের সঙ্গে তাদের জোট সম্ভব নয়।

তাহলে জোট হচ্ছেটা কোথায়? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া খুব কঠিন। বোধকরি রাহুল গান্ধি-মল্লিকার্জুন খাড়গেরাও এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হিমসিম খাবেন।

প্রথম দিকে তাঁদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসটি দেখে মনে হচ্ছিল লোকসভা নির্বাচনে তাঁরা বুঝি বিজেপিকে একটি চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারবেন। বিজেপি নেতৃত্বও কিঞ্চিৎ চিন্তিত হয়েছিল। ইন্ডিয়া জোটের পালটা হিসেবে তারাও তাদের মৃতপ্রায় শরিকদের বাজারে এনে হাজির করিয়েছিল। কিন্তু এসবই ছিল সাময়িক। যত দিন গেল, জোটের ছবিটি মলিন হতে থাকল এবং তার ছন্নছাড়া চেহারাটিও ক্রমশ প্রকাশ হয়ে পড়ল। আর এখন রাম মন্দির উদ্বোধন করে বীরবিক্রমে নরেন্দ্র মোদি যখন হিন্দুত্বের জোরে ভোট চাইতে বাজারে নেমেছেন, তখন উলটোদিকে ইন্ডিয়া জোটটি থাকবে কি না সেই প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে। লালুপ্রসাদ এবং খাড়গে যতই বলুন না ইন্ডিয়া জোট অটুট, আসলে এই জোটটি নির্বাচন পর্যন্ত টিকবে কি না সে নিশ্চয়তার সুর তাঁদের কণ্ঠেও ধ্বনিত হচ্ছে না।

প্রশ্ন হচ্ছে, জোটের এই ছন্নছাড়া চেহারার জন্য দায়ী কারা? দেশের মানুষ ১৯৭৭ সালে কেন্দ্রে জনতা দলের জোট সরকার দেখেছিল। তারপর চরণ সিং, চন্দ্রশেখর, বিশ্বনাথপ্রতাপ সিং, ইন্দ্রকুমার গুজরাল প্রমুখের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার দেখেছে।

জোট সরকারগুলি সম্পর্কে দেশের মানুষের অভিজ্ঞতা খুব সুমধুর নয়। কোনও জোট সরকারই তার পূর্ণ কার্যকাল পূরণ করতে পারেনি। তারপর থেকেই কেন্দ্রে বিরোধী জোটের জন্ম হতে দেখলে, স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মনে প্রশ্নটি দানা বাঁধে, এই জোট টিকবে তো। ইন্ডিয়া জোটের নেতাদের উচিত ছিল, এই ধারণাটি দূর করে মানুষের মনে জোটের স্থায়িত্ব সম্পর্কে বিশ্বাসের জন্ম দেওয়া। সেই কাজটি করতে জোটের নেতারা ব্যর্থ। সেই কাজটি করার আন্তরিকতাই তাঁরা দেখাননি। এখন ভোটের মাসদুয়েক আগে যদি জোটের স্থায়িত্ব নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন ওঠে, তাহলে এই জোট সম্পর্কে আস্থাও হারিয়ে ফেলবেন মানুষ। তাতে সম্পূর্ণ লাভ বিজেপির। বিজেপি সেই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছেও।

জোট যে দানা বাঁধতে পারছে না এর জন্য দায়ী কারা তাহলে? এককথায় কমবেশি সব বিরোধীই এর জন্য দায়ী। কংগ্রেস প্রথমে জোটের বিষয়ে প্রবল উৎসাহ নিয়ে এগোলেও কর্ণাটক নির্বাচন এবং তারপর মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তিশগড়ের নির্বাচনে কার্যত জোটকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের সুবিধামতো অবস্থান নিয়েছিল। ওই নির্বাচনগুলির সময় থেকেই জোটের হাওয়া ম্রিয়মাণ হতে থাকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মতো নেতারা যতবার আসন সমঝোতার বিষয়টি পাকা করে নিতে বলেছেন, ততবার পাশ কাটিয়ে গিয়েছে কংগ্রেস। হয়তো কংগ্রেস ভেবেছিল, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়ে ভালো ফল করলে শরিকদের ওপর ছড়ি ঘোরানো যাবে। জোটের গতিটা ওই যে তখন শ্লথ হয়ে পড়ল, তারপর তাতে আর নতুন করে কোনও গতি আনা গেল না। মমতা, অরবিন্দের মতো শরিক নেতা-নেত্রীদের কথা শুনে যদি তখনই আসন সমঝোতার বিষয়টি পাকা করে নিত কংগ্রেস, তাহলে হয়তো জোটের এমন দৈন্যদশা আজ হত না। কংগ্রেস এই দায়টা এড়াতে পারে না।

দায় কিছু কম নয় শরিকদেরও। জোটের অন্যতম শরিক মমতার কথা ধরুন। যেভাবে তিনি জোট গঠনের প্রাথমিক উদ্যোক্তা নীতীশ কুমারকে কার্যত অপাংক্তেয় করে খাড়গেকে জোটের আহ্বায়ক করার প্রস্তাব করেছিলেন, তা যে শুধু কংগ্রেসকে অস্বস্তিতে ফেলেছিল তা নয়, নীতীশকেও বিলক্ষণ চটিয়ে দিয়েছিল। বলতে গেলে তখন থেকেই জোট সম্পর্কে আগ্রহ হারাতে শুরু করেছিলেন নীতীশ। মমতার বোঝা উচিত ছিল, জোটের সিদ্ধান্ত হয় যৌথভাবে। ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত সেখানে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করাই অনুচিত। বিজেপি বিরোধী জোট গড়ে তুলতে প্রথম দিকে মমতা যতটা উৎসাহ দেখিয়েছিলেন, সেই উৎসাহও এখন অনেকটাই অস্তমিত। বরং এখন মমতার বক্তব্য শুনলে মনে হয় জোটের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটি দায়সারা গোছের। তদুপরি, বিভিন্ন রাজ্যে কমলনাথ, অধীর চৌধুরীর মতো নেতারা আছেন। যাঁদের কাছে ব্যক্তিগত ইগোর কাছে জাতীয় রাজনীতির গুরুত্বটি তুচ্ছ। এঁদের বিভিন্ন কার্যকলাপ এবং বক্তব্য জোট গঠনের পক্ষে বারবার অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে, দাঁড়াচ্ছেও।

আসলে একটি জোট গড়ে ওঠে পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাসের ওপর। জোট নেতারা কখনোই সেই পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাস দেখাতে পারেননি। দেশের নির্বাচকমণ্ডলীর যে বড় একটি অংশ বিজেপির হিন্দুত্বের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নন, দিনের শেষে তাদের বিশ্বাসও কি নষ্ট করছেন না জোটের নেতারা?

Uttarbanga Sambad
Uttarbanga Sambadhttps://uttarbangasambad.com/
Uttarbanga Sambad was started on 19 May 1980 in a small letterpress in Siliguri. Due to its huge popularity, in 1981 web offset press was installed. Computerized typesetting was introduced in the year 1985.
RELATED ARTICLES
- Advertisment -
- Advertisment -spot_img

LATEST POSTS

NH 10 | ফের বন্ধ থাকছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক

0
শিলিগুড়ি: ফের বন্ধ থাকছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। এবার ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের (NH 10) রবিঝোরা থেকে ২৯ মাইল পর্যন্ত সমস্ত ধরনের যান চলাচল...
NBMCH

NBMCH | সরকারি এক্স-রে বসিয়ে বেসরকারি সংস্থাকে ব্যবসার সুযোগ, বিতর্কে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল

0
শিলিগুড়ি: এক্স-রে করা নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে প্রচুর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি এক্স-রে মেশিনে বিনামূল্যে পরিষেবা পাওয়ার কথা। অভিযোগ, তার বদলে বেসরকারি...

Partha Chatterjee | ‘বিরোধীদের থেকে দলের বেশি ক্ষতি করেছে কুণাল’ বললেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী

0
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: কুণাল ঘোষকে (Kunal Ghosh) নিয়ে মুখ খুললেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। নিয়োগ দুর্নীতির (Teacher recruitment scam) মামলার শুনানির...

চা গাছ বাঁচাতে ভরসা কৃত্রিম জলসেচ, বিদ্যুৎখাতে ভরতুকির দাবিতে মন্ত্রীকে চিঠি

0
নাগরাকাটা: আগুন রোদে পুড়ছে চা বাগান। পাল্লা দিয়ে শুরু হয়েছে লুপার, রেড স্পাইডার, গ্রিন থ্রিবসের মতো নানা মারণ রোগপোকার আক্রমণ। পরিস্থিতির মোকাবিলায় গাছকে বাঁচিয়ে...

Narendra Modi | বোসকে নিয়ে বিতর্কের মাঝেই রাজভবনে রাত্রিবাস মোদির

0
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: রাজ্যপাল (Bengal Governor) সিভি আনন্দ বোসের (CV Ananda Bose) বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ঘিরে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। এই বিতর্কের মাঝেই বৃহস্পতিবার...

Most Popular