উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ গাজায় যুদ্ধ কিছুতেই থামাতে চাইছে না ইজরায়েল। রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে ইজরায়েলের উদ্দেশে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেওয়া হলেও যুদ্ধ থামানোর কোনও লক্ষণ নেই, বরং যুদ্ধের তীব্রতা বাড়াচ্ছে গাজায়। ইজরায়েলের লক্ষ্য একটাই, হামাস বাহিনীকে খতম করা। রবিবারও গাজায় স্থলপথে প্রচুর সেনা ঢুকিয়েছে ইজরায়েল। ঠিক কত সংখ্যক সেনা গাজায় প্রবেশ করেছে, তা খোলসা করেননি ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি।
জানা গিয়েছে, রবিবার গাজায় নতুন করে প্রবেশ করেছে বিরাট ইজরায়েলি স্থলবাহিনী। এদিনই হামাসের সাড়ে চারশো ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে তাঁদের যুদ্ধবিমান। ইতিমধ্যেই উত্তর গাজায় ছেয়ে গেছে ইজরায়েলি সেনায়। সেই অঞ্চলের সাধারন মানুষকে ইজরায়েলের তরফে বলা হয়েছে প্রাণ বাঁচাতে দক্ষিণ গাজার দিকে চলে যেতে। ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, উত্তর গাজার আল-কুয়াদ হাসপাতাল ফাঁকা করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইজরায়েলের এই নির্দেশে স্তম্ভিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’। হু-র প্রধান টেড্রস অ্যাডানম গেব্রিয়েসাস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘একটা হাসপাতাল, তাতে রোগী উপচে পড়ছে। এ অবস্থায় কী ভাবে তাঁদের অন্যত্র স্থানান্তরিত করা সম্ভব!’’
এদিকে গাজায় ঢুকে আকাশ ও স্থলপথে আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়েই চলেছে ইজরায়েল। এক দিকে চলছে স্থল-অভিযান, অন্য দিকে, চলছে একনাগাড়ে বিমান হানা। মিনিটে মিনিটে বিস্ফোরণে কেঁপে উঠছে গাজার বিভিন্ন প্রান্ত। রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আজ বলেন, ‘‘অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ হওয়া উচিত। বন্দিদের মুক্তি দেওয়া উচিত। কিন্তু তা না করে, ইজরায়েল আরও তীব্র গতিতে হামলা শুরু করেছে।’’
আজ একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি জানিয়েছে, উত্তর গাজায় স্থলপথে অভিযান চালাচ্ছে জোরকদমে। সেখানে হামাসের বন্দুকবাজদের মুখোমুখি হয়েছিল তারা। দু’পক্ষের গুলি বিনিময় চলে। শেষে সেনার গুলিতে হামাসের বহু জঙ্গি প্রাণ হারায়। ইজরায়েলি সেনাবাহিনীকে নিশানা করে যারা হামলা চালিয়েছিল তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। গাজা স্ট্রিপে জিকিম এলাকার কাছে সন্ত্রাসবাদীদের চিহ্নিত করে শেষ করা হয়েছে।’’ অপরদিকে হামাসের ইজেদিন আল-কাসাম ব্রিগেড-ও সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছে, উত্তর গাজার বেট লাহিয়ার কাছে ইজরায়েলের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ চলেছে। এই সংঘর্ষে বহু ইজরায়েলি সেনাকে হত্যা করেছে তারা।
ইজরায়েলের তরফে জানানো হয়েছে, হামাসের গোপন ডেরায় ইজরায়েলের কমপক্ষে ২৪০ জনকে বন্দি করে রাকাহা হয়েছে। যত দিন যাচ্ছে, তাঁদের বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা কমছে। হামাস ইতিমধ্যেই দাবি করেছে, বন্দিদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ইজরায়েলের বোমায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫০ জন বন্দি। যদিও এর সত্যতা জানা নেই। হামাসের হাতে বন্দি রয়েছে ইনবার হেম্যান নামে এক ইজরায়েলি তরুণী। তাঁর প্রেমিক নোয়াম সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টে লেখেন, ‘‘এখন সরকারের হাতে সবটা। ওরা ঠিক করবে, ইনবার ফিরবে কি না। আমি আশা করি দেশ সব রকম চেষ্টা করবে। এটাই সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত সরকারের।’’
নোয়াম আরও বলেন, “রাতে ঘুমোতে পারছি না। তিন সপ্তাহ কেটে গিয়েছে, বন্দিদের সঙ্গে কী হচ্ছে, এটা ভেবে শিউরে উঠছি। আশা করি আইডিএফ ইজরায়েল ও প্যালেস্টাইনের সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন করবে না। আমি শক্ত হওয়ার চেষ্টা করছি।’’
এদিকে রবিবার ইন্টারনেট ও ফোন যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল গাজায়। আজ সেটা কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। কিন্তু খাদ্য ও পানীয়ের সঙ্কট চরমে। হাজার হাজার মানুষ আজ একটি গুদামঘরে লুটপাট চালান। সেখানে ত্রাণ সামগ্রী মজুত ছিল। আব্দুল রহমান আল খিলানি নামে এক যুবক বলেন, ‘‘আমাদের কাছে আটা-ময়দা নেই, ওষুধ নেই, জল নেই। একটা শৌচাগার পর্যন্ত নেই। বাড়িঘর ভেঙে গিয়েছে। কেউ আমাদের দেখছে না। সব দেশ আমাদের বিরুদ্ধে। উপায় থাকলে কখনও লুটপাট করতাম না।’’
রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলার ক্রমশ অবনতি হচ্ছে গাজায়। মূলত আটা-ময়দা, শৌচসামগ্রী লুট হয়েছে। ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত মাত্র ৮০টি ত্রাণের ট্রাক গাজায় ঢুকতে দিয়েছে ইজরায়েল। যা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত কম।