রায়গঞ্জ: ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর জিতেন্দ্র সিং বনাম ভারতের পরিবেশ মন্ত্রকের মামলায় রায়ের ১৮-২১ অনুচ্ছেদে সুপ্রিম কোর্ট উল্লেখ করেছিল, যে কোনও ধরনের জলাশয় বন্ধে যে কোনও পদক্ষেপই সংবিধান বিরোধী, আইনত দণ্ডনীয় এবং পরিবেশ রক্ষায় নাগরিক অধিকার ও কর্তব্যের লঙ্ঘন। কিন্তু বহু জায়গার মতো রায়গঞ্জেও বিচারের বাণী শুধু নীরবে নিভৃতে কাঁদেই না, ভীষণ হাস্যস্পদে পরিণত হয়। ১০ বছর আগের তুলনায় বর্তমানে রায়গঞ্জে নয়ানজুলি ও জলাশয় বুজিয়ে নির্মাণ কয়েক গুণ বেড়েছে। তাই এবার জলাশয় ভরাটের প্রতিবাদে সরব হয়েছেন রায়গঞ্জের বিশিষ্টজনেরা। অবিলম্বে জলাশয় ভরাট বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
রায়গঞ্জ ব্লকের মাড়াইকুড়া অঞ্চলের পদ্মপুকুর এলাকায় বিশালাকার জলাশয় দিনের আলোয় ভরাট করা হলেও প্রশাসন নীরব। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, মাটি ভরাটের পর কয়েকগুণ বেশি দামে এই জায়গা বিক্রি করা হবে। তার প্রস্তুতি চলছে। মাটি ভরাটের সঙ্গে শাসকদলের কেষ্টবিষ্টুরা জড়িত থাকায় পুলিশ বা প্রশাসনের কোনও বাধা নেই।
মাটি কাটা ও ভরাটে পঞ্চায়েতের কোনও এনওসি নেওয়া হয়নি বলে দাবি করেছেন প্রধান তৃষা প্রামানিক। তাঁর স্বামী তথা যুব তৃণমূলের সহসভাপতি কুশল প্রামাণিক জানান, ব্লক ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিক কোরাপটেড। তাঁকে একাধিকবার বলা সত্বেও কাজ বন্ধ করেননি। প্রায় আট বিঘা জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে। কারও কোনও এনওসি নেওয়া হয়নি।’
রায়গঞ্জ ব্লক ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিক শুভঙ্কর সাহার দাবি, ‘মাড়াইকুড়া অঞ্চলে সব ধরনের মাটি কাটার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। মাটি কাটলে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের এনওসি নিতে হবে। আগামীকাল পদ্মপুকুর এলাকায় যাব।’ রায়গঞ্জের বিশিষ্ট সমাজসেবী তথা শিক্ষক ভাস্কর ভট্টাচার্য বলেন, ‘চোখের সামনে পুকুর চুরি দেখেও প্রশাসন কোনও রহস্যময় কারণে নির্বিকল্প। আইনের রক্ষকরা নির্বাচিত ক্ষেত্রে কেন জানি না দৃষ্টিহীন। তাই এই পরিবেশ হনন সাধারণ নাগরিকদেরও সয়ে যেতে হচ্ছে।‘
শুধু ভাস্করবাবু নন, সাধারণ মানুষজনের নিশানাতেও ভূমি দপ্তরের কর্তারা। সবারই বক্তব্য, প্রশাসন জড়িত না থাকলে মাফিয়ারা এভাবে পুকুর ভরাট করতে পারে না। নিজেদের পকেট মোটা করতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে চিন্তাভাবনাও নেই প্রশাসনিক কর্তাদের। তাঁদের ভেবে দেখা দরকার, বাঁচতেই না পারলে পকেট মোটা করে কী হবে!