খড়িবাড়ি: কোলে বাঁধা রয়েছে ১১ মাসের শিশু। টোটো চালাচ্ছেন মা। খড়িবাড়ি ব্লকের পানিট্যাঙ্কির বাসিন্দা ওই মায়ের জীবনযুদ্ধের কাহিনি শুনলে অবাক হবেন আপনিও। সেই ভোর সাড়ে ৬টায় টোটো নিয়ে বেরিয়ে পড়েন মা চন্দনা রায়। চালকের আসনে বসে রয়েছেন তিনি। মায়ের কোমরের সঙ্গে বাঁধা রয়েছে ছোট্ট শিশু। গাড়িতেই থাকে ফিডিং বোতল। সেখান থেকে মাঝেমধ্যে তিনি সন্তানকে দুধ খাওয়ান। এরপর দুপুরে একবার বাড়ি ফিরে সন্তানকে স্নান করিয়ে খাইয়ে ফের টোটো নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি।
এটাই তাঁর রোজকার লড়াইয়ের কাহিনি। এভাবেই তিনি দুই সন্তানকে পালনের পাশাপাশি টোটো চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। ভারত নেপাল সীমান্ত এলাকা পানিট্যাঙ্কির ছোট বদরা জোতের বাসিন্দা চন্দনা রায় নেপালের কাকড়ভিটা থেকে নকশালবাড়ির রাস্তায় টোটো চালান। নুন আনতে পান্তা ফুরনোর অবস্থা পরিবারের। টোটোর চাকা না ঘুরলে বাড়িতে উনুন জ্বলে না। বাড়িতে ১১ মাসের শিশু শুভঙ্কর রায় ছাড়াও রয়েছে সাড়ে তিন বছরের ছেলে ইন্দ্রজিৎ রায়। প্রতিদিন বড় ছেলে ইন্দ্রজিৎকে বাড়িতে অসুস্থ শ্বশুর বসন্ত রায়ের কাছে ছেড়ে টোটো নিয়ে বেরিয়ে পড়েন চন্দনা। সঙ্গে থাকেন শুভঙ্কর। মাঝেমধ্যেই রাস্তায় টোটো থামিয়ে ছোট শিশু শুভঙ্করকে দুধ খাওয়ান তিনি। বছরখানেক আগে তাঁর স্বামী কমল রায়ের মৃত্যু হয়। তারপরই সব দায়িত্ব নেন চন্দনা।
চন্দনা বলেন, ‘বিধবা হওয়ার পরেও কোনরকম ভাতা কিংবা সরকারি সুযোগসুবিধা আমাকে দেওয়া হয়নি। একটি ঘর পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিলাম কিন্তু কিছুই হয়নি। শেষে নিজেই সংসারের হাল ধরতে টোটো চালাতে শিখেছি। বাড়িতে অসুস্থ শ্বশুর রয়েছে হাত পা চলে না। প্রথমদিকে রাস্তায় টোটো বের করা একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পরে সব ঠিক হয়ে যায়।‘
খড়িবাড়ি ব্লকের রানিগঞ্জ পানিশালী গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সান্ত্বনা সিংহ বলেন, ‘যারা বিধবা ভাতার জন্য দুয়ারে সরকারের আবেদন করেছিল তারা প্রত্যেকেই পেয়ে গেছেন। কিছু নথিপত্রে ভুল থাকলে পাওয়া যায় না। চন্দনার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’