সানি সরকার, শিলিগুড়ি: ফের প্রাকৃতিক দুর্যোগে উত্তর সিকিম (Sikkim)। যথারীতি সেখানে বেড়াতে গিয়ে চুংথাং ও লাচুংয়ে আটকে পড়লেন দেড় হাজারেরও বেশি পর্যটক (Tourist Stuck)। নতুন করে সাংকালাং সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ওই পর্যটকদের কীভাবে গ্যাংটকে ফিরিয়ে আনা হবে, তা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রশাসনের কাছে। কেননা, বায়ুসেনার সাহায্য পাওয়া গেলেও আবহাওয়া অনুকূল না হওয়া পর্যন্ত যে হেলিকপ্টার উড়তে পারবে না, তা বুঝতে পারছেন মংগন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। তার মধ্যে মংগনে নতুন করে লাল সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দপ্তর। সিকিমের সর্বত্রই ভারী বর্ষণের (Heavy Rain) পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এমন অবস্থায় সেনার সাহায্যে কয়েকটি রাস্তা এবং অস্থায়ীভাবে সাংকালাংয়ে সেতু তৈরি করে পর্যটকদের ফিরিয়ে আনার ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে।
সিকিম প্রশাসন সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে চুংথাংয়ে ৭০০ ও লাচুংয়ে প্রায় ৮০০ পর্যটক আটকে রয়েছেন। পর্যটন দপ্তরের এক কর্তা বলছেন, ‘উদ্ধারকাজে জোর দেওয়া হচ্ছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পর্যটকদের সমতলে ফেরানো হবে।’
আবহাওয়ার পরিবর্তন যে এখনই ঘটছে না, তা স্পষ্ট। আর তাতেই ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের (NH 10) ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। মল্লি, ২৮ মাইল, ২৭ মাইল সহ একাধিক জায়গায় জাতীয় সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার জন্য মল্লি থেকে চিত্রে, মল্লি থেকে ২৯ মাইল সহ কয়েক জায়গায় যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। রংপো-শিলিগুড়ির মধ্যে সমস্ত গাড়িকে কার্যত আলগাড়া, লাভা, গরুবাথান হয়ে চলাচলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কালিম্পংয়ের (Kalimpong) জেলা শাসক বালাসুব্রহ্মণিয়ান টি’র বক্তব্য, ‘প্রবল বর্ষণের জেরে জাতীয় সড়কের কয়েকটি জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
একদিকে উত্তর সিকিম বিপর্যস্ত, তিস্তার ছোবলে কালিম্পং-দার্জিলিং রুট বন্ধ, তার মধ্যে জাতীয় সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত, ফলে পাহাড়ি পর্যটনের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তাতে অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে সিকিম তো বটেই, কালিম্পং পাহাড়েও। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখনই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে কাজ শুরু করে দেওয়ার দাবি তুলছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। কালিম্পং হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিদ্ধান্ত সুদ বলছেন, ‘পর্যটন মরশুম শুরুর মুখেই দিনের পর দিন বন্ধ ছিল জাতীয় সড়ক। বৃহস্পতিবার থেকে রাস্তাটি আবার বন্ধ করে দেওয়া হল। তার প্রভাব তো কালিম্পংয়ে পড়বেই। মূলত জাতীয় সড়কটির জন্য দার্জিলিং থেকে আমরা পিছিয়ে পড়ছি।’
গত অক্টোবরে সাউথ লোনাক লেক বিপর্যয়ের জেরে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল ১০ নম্বর জাতীয় সড়কটি। এরপরও বারবার বন্ধ থাকায় কী কাজ হল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। কালিম্পংয়ের পরিবহণ ব্যবসায়ী প্রদীপ গুরুংয়ের কথায়, ‘আমরা বুঝতে পারছি না সাত মাস হয়ে গেলেও রাস্তাটির সমস্যা কেন স্থায়ীভাবে মেটানো হল না।’
বারবার পর্যটক আটকে পড়লে এবং উত্তর সিকিম বিপন্ন হয়ে পড়লে তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী বলে মনে করছেন লাচেনের হোটেল ব্যবসায়ী কল্পক দে। তিনি বলছেন, ‘এখন সমাজমাধ্যমের যুগ। কিছু হলেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। ফলে সিকিমে বেড়াতে এসে কে বিপদে পড়তে চাইবে!’
হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যালের মতে, ‘এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক কাঠামো দাঁড়িয়ে রয়েছে পর্যটনের ওপর। কিন্তু পর্যটনই সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত।’