সানি সরকার, শিলিগুড়ি: প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে দুর্ভোগে ট্রেনযাত্রীরা। দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গগামী ট্রেন(Train) তো বটেই, অসম থেকে উত্তরবঙ্গ হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে চলা ট্রেনগুলিও কয়েক ঘণ্টা দেরিতে চলছে। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে না পেরে অনেকেই ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। আবার অনেকে সমস্যায় পড়লেও প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মেনে নিচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে বড় একটা অংশ বুধবার নিউ জলপাইগুড়িতে পা রেখে শিলিগুড়ির আবহাওয়া দেখে মোহিত হয়ে যান। ‘শিলিগুড়ির(Siliguri) আবহাওয়া যখন এত সুন্দর, পাহাড় তো আরও অপরূপ’, বলতে শোনা গিয়েছে দক্ষিণবঙ্গের অনেক পর্যটককে। তাঁদের গন্তব্য যে গ্যাংটক অথবা দার্জিলিং, বুঝতে অসুবিধা হয় না।
কয়েকদিন ধরেই ঝড়-বৃষ্টির সাক্ষী থাকছে দক্ষিণবঙ্গ। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও আছড়ে পড়ছে ঝড়। দোসর হয়ে উপস্থিত ভারী বৃষ্টি, যা স্বস্তি এনে দিয়েছে সেখানকার বাসিন্দাদের। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে কলকাতা, হাওড়া, বর্ধমান, হুগলি, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা সহ বেশ কয়েকটি জেলায় লাল সতর্কতা জারি করে আবহাওয়া দপ্তর। রাত ১০টার পর থেকে একাধিক জায়গায় ঘণ্টায় ৬০-৭০ কিলোমিটার গতিতে ঝড় শুরু হয়ে যায়। যার ফলে দার্জিলিং মেল, পদাতিক এক্সপ্রেস, উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসের মতো উত্তরবঙ্গগামী কয়েকটি ট্রেনকে বিভিন্ন স্টেশনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। পদাতিককে রামপুরহাটে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল বলে জানান আকাশনীল চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছিল সে সময়। এত আওয়াজ হচ্ছিল যে আমরা অনেকেই ভয় পেয়ে যাই।’
পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে ট্রেনগুলির যাত্রা শুরু হয় বলে রেল সূত্রে খবর। যার জেরে এদিন ৮টা ৫ মিনিটের পরিবর্তে দার্জিলিং মেল এনজেপিতে পৌঁছায় ১১টা নাগাদ। ট্রেনটি হলদিবাড়িতে ৯টা ৫৫ মিনিটের পরিবর্তে পৌঁছায় ১২টা ২৫ মিনিটে। পদাতিক ৯টা ১৫ মিনিটের পরিবর্তে ১০টা ৪০ এবং নিউ আলিপুরদুয়ারে ১২টা ২৫ মিনিটের পরিবর্তে ২টায় পৌঁছায়।
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলছেন, ‘প্রচণ্ড গতিতে ঝড় হওয়ায় ঝুঁকি এড়াতে ট্রেনগুলিকে বিভিন্ন স্টেশনে দাঁড় করানো হয়েছিল।’
তাৎপর্যপূর্ণভাবে এদিন নিউ আলিপুরদুয়ারে নির্দিষ্ট সময়ের আগে পৌঁছালেও তিস্তা-তোর্ষা এক্সপ্রেস শিয়ালদার উদ্দেশে রওনা দেয় দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের পরিবর্তে ৩টা ২৫ মিনিটে। এই দেরির ব্যাখ্যা অবশ্য পাওয়া যায়নি রেলকর্তাদের কাছ থেকে। যথারীতি শিয়ালদাগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস প্রায় ছয় ঘণ্টা, হাওড়াগামী কামরূপ এক্সপ্রেস আড়াই ঘণ্টা ও সরাইঘাট এক্সপ্রেস এক ঘণ্টা দেরিতে চলাচল করছে। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে বলছেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। আপ বা ডাউন, একটি রুটের ট্রেন লেট হলে ফিরতি রুটে তার প্রভাব পড়ছে। তবে দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’
এদিকে, এদিন এনজেপিতে পৌঁছে পালটে যাওয়া আবহাওয়া দেখে খুশি হয়ে ওঠেন দক্ষিণবঙ্গের পর্যটকরা। নারকেলডাঙ্গার সুপ্রতীক বসু বলেন, ‘আমাদের ওখানেও ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু এত সুন্দর পরিবেশ নেই।’ দার্জিলিংয়ের আবহাওয়া সম্পর্কে খোঁজ নিতে দেখা গেল তাঁকে। তাঁর মতোই পাহাড়ের আবহাওয়া সম্পর্ক জেনে দমদমের প্রদ্যুৎ গুহ বললেন, ‘বেড়াতে আসার সিদ্ধান্ত এখন সঠিক মনে হচ্ছে।’