শিলিগুড়ি: রেল কর্তৃপক্ষ এখনও দূরপাল্লার টিকিট (Train Ticket) ক্রয়ে অনলাইন পেমেন্ট বাধ্যতামূলক করে কোনও সরকারি নির্দেশ দেয়নি। কিন্তু একশ্রেণির বুকিং ক্লার্ক শিলিগুড়ি (Siliguri) শহরের একাধিক দূরপাল্লার ট্রেনের বুকিং কাউন্টারে টিকিট কাটতে আসা মানুষজনকে কার্যত জোর করে অনলাইন পেমেন্টে (Online Payment) বাধ্য করছেন। ফলে বিষয়টিতে সড়োগড়ো নন এমন বহু মানুষ বিপাকে পড়ছেন। অনেককে কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়ানো অজানা-অচেনা মানুষের সহায়তা নিতে হচ্ছে। বিষয়টি ‘একেবারেই অবৈধ’ বলে স্বীকার করেছেন উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে। তিনি স্পষ্ট বলেন, ‘টিকিটের দাম অনলাইনে মেটানোর বাধ্যতামূলক কোনও নিয়ম নেই।’
বৃহস্পতিবার ভেনাস মোড় লাগোয়া রেলের সিটি বুকিং সেন্টারে টিকিট কাটতে গিয়েছিলেন অশোক পাল নামে শিলিগুড়ির এক বাসিন্দা। টিকিট কাটার পরই তিনি অস্বস্তিতে পড়েন। দাম মেটাতে নগদ টাকা দিতেই কাউন্টারের কর্মী জানান, দাম অনলাইনে দিতে হবে। শেষমেশ লাইনে দাঁড়ানো অন্য একজনকে নগদ টাকা দিয়ে তাঁর সাহায্যে অনলাইনে দাম মেটান অশোক। ক্ষোভের সুরে তিনি বলেন, ‘কাউন্টারগুলির সামনে রেলের নির্দেশদাতার সই, স্ট্যাম্প ছাড়া একটি সাদা কাগজ সাঁটিয়ে অনলাইন পেমেন্টের কথা জানানো হয়েছে।’ এদিন অনলাইনে পেমেন্ট বাধ্যতামূলক শুনে অনেকেই টিকিট না কেটে ফিরে যান। অনেকে টিকিট টাকার পর অনলাইনে পেমেন্ট বাধ্যতামূলক শুনে বচসায় জড়িয়ে পড়ছেন। অনেকে আবার হতভম্ব হয়ে পড়ছেন।
সিটি বুকিং সেন্টারে এমন পরিস্থিতির মুখে পড়ে সম্প্রতি ‘রেল মদত’-এ অভিযোগ জানান বিধান মার্কেটের ব্যবসায়ী অসিত দে। তিনি বলেন, ‘অভিযোগ দায়েরের কিছুক্ষণের মধ্যে রেল থেকে ফোন করে গোটা ঘটনাটি শোনা হয়। এরপর আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে আমি ওই বুকিং সেন্টারে রয়েছি কি না তা জানতে চাওয়া হয়।’ প্রয়োজনে সিটি বুকিং সেন্টারের কর্মীর সঙ্গে কথা বলে তাঁকে ফের টিকিট বুকিংয়ের আশ্বাসও দেয় রেল। এরপর তিনি বৃহস্পতিবার ফের একই সিটি বুকিং সেন্টারে গেলে তখনও অনলাইনে টিকিটের টাকা মেটানোর কথা কাউন্টার থেকে বলা হয়। এনিয়ে তাঁর সঙ্গে বুকিং ক্লার্কের বচসাও হয়। পরে অবশ্য নগদ টাকায় টিকিটের দাম নিতে বাধ্য হন ওই কর্মী। আসলে খুচরো সমস্যা থেকে বাঁচতেই রেলের বুকিং ক্লার্কদের একাংশ এমন ‘স্বঘোষিত নিয়ম’ চালু করেছেন বলে রেল সূত্রে খবর। শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনের পিছনের কাউন্টারে একই অভিজ্ঞতা হয় এই প্রতিবেদকের। এনজেপির কাউন্টারেও এমন ‘অলিখিত নির্দেশ’ জারি হয়েছিল। পরে যাত্রীর চাপে ওই নিয়ম তুলে নিতে বাধ্য হন বুকিং ক্লার্করা।
এপ্রসঙ্গে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে বলেন, ‘বিষয়টা একেবারেই অবৈধ। টিকিটের দাম অনলাইনে মেটানো বাধ্যতামূলক বলে রেল থেকে এখনও কোনও নিয়ম চালু হয়নি।’ একই সমস্যার পড়েন ফুলবাড়ি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান আনন্দ সিনহাও। তিনি বলেন, ‘গরিব, বয়স্ক মানুষজন অনলাইনে লেনদেন করেন না। এভাবে রেলের মানুষকে বিরক্ত করার অধিকার নেই।’