দিনহাটা: সম্প্রসারণের জন্য রাস্তার দু’ধারের ১৭৩টি বড় গাছের কাটা পড়ার কথা। খাতায় কলমে তার হিসেবও রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ছোট-বড় গাছ মিলিয়ে কাটা গাছের সংখ্যা ইতিমধ্যেই প্রায় সাড়ে তিনশো ছুঁইছুঁই। দিনহাটা মহকুমার সাহেবগঞ্জ রোড সম্প্রসারণের আগে দু’ধারের গাছ কাটা ঘিরে এমন গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, রাস্তা থেকে দূরের বহু দামী সেগুন, মেহগনি, গামার গাছও নির্বিচারে কেটে ফেলা হয়েছে। সরকারি হিসেবের বাইরে থাকা এসব গাছ পৌঁছে যাচ্ছে এলাকার প্রভাবশালীদের বাড়িতে। কিংবা মুনাফা ঘুরপথে স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতাদের পকেটে ঢুকছে।
সাহেবগঞ্জ রোডের দু’ধারে সবচেয়ে বেশি গাছ রয়েছে দিনহাটা-১ ব্লকের দিনহাটা ভিলেজ-২ এবং দিনহাটা-২ ব্লকের বড়শাকদল ও সাহেবগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। এই দুটি গ্রাম পঞ্চায়েতের দ্বিতীয় খণ্ডভাংনী, বামনটারি, আমবাড়ি, লাঙ্গুলিয়া, বড়শাকদল এলাকায় যথেচ্ছ গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে। যদিও অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে সাফাই স্থানীয় প্রশাসনের। দিনহাটা ভিলেজ-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত প্রধান কণিকা বর্মনের স্বামী সন্তোষ বর্মন বলেন, ‘অভিযোগের সারবত্তা নেই। নিয়ম মেনে নির্ধারিত গাছই কাটা হয়েছে। এর বাইরে রাতের অন্ধকারে কেউ গাছ কেটে নিয়ে থাকলে আমাদের জানা নেই।’ অভিযোগের সত্যতা নেই বলে দাবি করেছেন সাহেবগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অভিজিৎ বর্মনও। বড়শাকদলের পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী কমল রায়ের মন্তব্য, ‘এরকম কোনও বিষয় নেই। প্রশাসনের সামনে স্বচ্ছতার সঙ্গে সব হচ্ছে।’ পূর্ত ও সড়ক দপ্তরের দিনহাটার ইঞ্জিনিয়ার শেখরচন্দ্র চন্দের কথায়, ‘সব নিয়ম মেনেই যে গাছগুলি কাজের ক্ষেত্রে সমস্যা করবে, সেসব চিহ্নিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই গ্রাম পঞ্চায়েত সেসব গাছ কাটার কাজও করছে। অনিয়ম রুখতে আমাদের দপ্তর প্রায়শই এ বিষয়ে নজর রাখছে।’
১৭৩টি গাছ কাটার জন্য রাস্তা সংলগ্ন গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে দায়িত্ব দিয়েছে পূর্ত (সড়ক) দপ্তর। পরবর্তীকালে নিলামের মাধ্যমে গাছগুলি বেচে গাছ কাটার ব্যয়ভার বহনের পাশাপাশি অতিরিক্ত অর্থ সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির তহবিলে জমা করার নির্দেশও রয়েছে। অভিযোগ, নম্বর দেওয়া নির্ধারিত গাছ ছাড়াও রাস্তার দু’ধারের বহু দামী গাছও কেটে ফেলা হচ্ছে। প্রমাণ লোপাটের জন্য তড়িঘড়ি গাছের গোড়া তুলে ফেলা ও ঢেকে দেওয়ার মতো কাজও চলছে।
রবিবার দিনহাটা ভিলেজ-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের স্প্রিংপুল এলাকায় দেখা গেল, অনেকক্ষেত্রে রাস্তা থেকে ৬-৭ ফুট দূরের দামী গাছ কাটা পড়েছে। আবার রাস্তার খুব কাছের বহু গাছ কাটা হয়নি। একই ছবি সাহেবগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের খাঁরুভাজ এবং বড়শাকদল গ্রাম পঞ্চায়েতের লাঙ্গুলিয়া, ত্রিমোহিনী, মীরেরকুঠিতেও। দ্বিতীয় খণ্ডভাংনীর এক তরুণ বলেন, ‘সরকারি হিসেবের তোয়াক্কা কে করবে? নেতা ও স্থানীয় প্রশাসনের মদতেই বহু দামী গাছ কাটা হয়েছে। রাস্তা বাড়বে সামান্যই। কিন্তু সম্প্রসারণের নামে লুটেপুটে খাবেন নেতারা।’ কৃষি ফার্ম এলাকার এক প্রবীণ বাসিন্দা টিপ্পনি কাটলেন, ‘লুঠতরাজ চলছে। রাস্তার ধারের দামী সেগুন, মেহগনি গাছ নিয়ে নেতাদের কাড়াকাড়িও হয়েছে। ভয়ে কেউই কিছু বলছেন না।’ বড়শাকদলের লাঙ্গুলিয়ার ঢোলের পাড় এলাকার এক বাসিন্দার আক্ষেপ, ‘প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের যেখানে মদত আছে, সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ কীই বা করবেন?’
পূর্ত(সড়ক) দপ্তরের দিনহাটা মহকুমা ডিভিশনের ইঞ্জিনিয়ার শেখরচন্দ্র চন্দের দাবি, ‘রাস্তাটি সাড়ে ৭ মিটার চওড়া হওয়ার কথা ছিল। এতে কয়েক হাজার গাছ কাটা পড়ত। কিন্তু যথাযথ ফান্ড না পাওয়া এবং পরিবেশের ক্ষতির কথা মাথায় রেখে সাড়ে ৫ মিটার চওড়া করা হবে। যতটা সম্ভব কম গাছ কেটে রাস্তাটির সম্প্রসারণের পক্ষপাতী আমরা। বেনিয়ম রুখতেও সচেষ্ট। এক বছরেই রাস্তার কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।’