বালুরঘাট: অবৈধভাবে সরকারি গাছ কাটা নিয়ে দায় ঠেলাঠেলি শাসকদল ও বিরোধী শিবিরের। যা নিয়ে এখন বালুরঘাটে রাজনৈতিক চাপানউতর চরমে। বিজেপি আঙ্গুল তুলেছে তৃণমূলের দিকে। আবার তৃণমূল বিজেপিকে কাঠগড়ায় তুলেছে। কিন্তু গাছ যে কাটা হচ্ছে এবং সেটা অপরাধ তা নিয়ে একমত দুই পক্ষই। এই পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
ঘটনা বালুরঘাট ব্লকের ভাটপাড়া গ্রামের। যেখানে গেলে রাস্তার ধারে তাকালেই দেখা যাবে একাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। একটা দুটো নয়। সারি সারি ভাবে মোটা গাছের গুড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন আয়তনের গাছ কাটা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ রয়েছে ইউক্যালিপ্টাস গাছ। ভাটপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে ঢুকে মাঝিগ্রাম সীমান্তে যেতে রাস্তার পাশে নয়ানজুলি রয়েছে। তার পাশেই ছিল উচুঁ গাছগুলো। এলাকাবাসীদের মতে, এই গাছগুলি কেটে পাশের জমিতে রাখা হয়। তারপরে সেগুলো পিকআপ ভ্যান ও ট্রাক্টর এসে মিলে নিয়ে চলে যায়। একমাস আগেই গ্রামের প্রধান তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যর স্বামীর বিরুদ্ধে সরকারি গাছ অবৈধভাবে কেটে পাচার করার অভিযোগ তোলেন। এমনকি তিনি থানায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এলাকায় পৌঁছে বালুরঘাট থানার পুলিশ গাছগুলি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। তার একমাস না পেরোতেই কয়েকদিন আগে বিজেপি কর্মীর ভাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সরব হন ওই তৃণমূল নেতা। বন দপ্তর সেই গাছগুলি আটক করে। অবৈধভাবে গাছ যে কাটা হচ্ছে, তা সকলেরই জানা। কিন্তু কাটছে কে? এই প্রশ্নের উত্তর এখনও অধরা। পরিবেশপ্রেমীদের তরফে বন দপ্তর ও প্রশাসনকে আরও কড়া নজরদারির আবেদন জানানো হয়েছে।
বিজেপির জেলা সম্পাদক বাপি সরকার বলেন, ‘বিজেপি গাছ কাটছে তৃণমূল শুধু মুখে বলছে। কোনও প্রমাণ দেখাতে পারবে না। কারণ গাছগুলি তারাই রাতারাতি কেটে সাফ করছে। আমরা রাতে হাতেনাতে ধরে গাছের গুড়িগুলি পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি। ওই এলাকার নদীর ধারে বনাঞ্চল কেটে ফেলেছে তৃণমূল। যা এখনও অব্যাহত। কিন্তু প্রশাসন নির্বিকার। ওই গ্রামের প্রধান তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের স্বামী বিরুদ্ধে থানায় অবৈধভাবে গাছ কেটে পাচার করার অভিযোগ জমা করেছিলেন। কিন্তু অভিযুক্ত এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা তার গ্রেপ্তারের দাবিতে থানা ঘেরাও করে আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
তৃণমূলের ব্লক সভাপতি স্বপন বর্মন জানান, ‘বিজেপির এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষমতায় বিজেপি রয়েছে। তৃণমূল কীভাবে কাটতে পারে? যদি আমাদের কোনও কর্মী কেটে থাকে। তাহলে ব্যবস্থা নেবে ওরা। নিজেরাই গাছ কেটে আমাদের দোষারোপ করছে বিজেপি।’
পরিবেশপ্রেমী তুহিন শুভ্র মণ্ডলের মতে, ‘এই জেলায় এমনিতেই তেমন প্রাকৃতিক বনাঞ্চল নেই। এইভাবে অবাধে গাছ কেটে মরুকরণের পথে হাঁটছি। সাধারণ মানুষকে গাছ কাটার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। প্রশাসন ও বন দপ্তরের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। আমরা পরিবেশপ্রেমী সংস্থার তরফে গিয়ে সচেতনতার অভিযান চালাব।’
দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক বিজিন কৃষ্ণা বলেন, ‘ঘটনাটি সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে শুনলাম। বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’