উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে প্রার্থী হয়েছেন একই পরিবারের তিন সদস্য। তিনজন তিন দলের। রাজ্যজুড়ে অশান্তির খবর মিললেও এই আসনে না আছে বিবাদ না আছে হিংসা। শুধু আছে প্রচারে টক্কর। এবারের পঞ্চায়েত ভোটে এমনই ঘটনার সাক্ষী থাকবে পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট ব্লকের কোলা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের আশুরালী গ্রাম।
কী কারণে একই পরিবারের তিন সদস্যকে প্রার্থী করল রাজ্যের যুযুধান তিন রাজনৈতিক দল? উদ্দেশ্য একটাই, সেটা হল গ্রাম পঞ্চায়েতে আসনটি সংরক্ষিত। জানা গিয়েছে, কোলাঘাট-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনটি ওবিসির জন্য সংরক্ষিত। গ্রামের এই একটিমাত্র পরিবার ওই সংরক্ষণের আওতায় পড়ে। তাই সিপিআইএম, তৃণমূল, বিজেপি, এই তিন রাজনৈতিক দল একই পরিবার থেকে প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে। এই গ্রামে সিপিএমের হয়ে লড়াই করছেন কাকা সন্ন্যাসী পাল, অন্যদিকে, তারই দুই ভাইপোর একজন শান্তনু পাল লড়ছেন তৃণমূল হয়ে আর এক ভাইপো উত্তম পাল লড়ছেন বিজেপির হয়ে।
পাল পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন দলের তিন প্রার্থীই পেশায় ছোটখাটো ব্যবসায়ী। সিপিএম প্রার্থী কাকা সন্ন্যাসী পালের দোকান রয়েছে কোলাঘাটে খড়িচক মোড়ে। তৃণমূল প্রার্থী শান্তনু পালের ফুলের ব্যবসা এবং বিজেপি প্রার্থী উত্তম পালের বাড়ির সামনে ছোটখাটো একটি দোকান। যদিও এদের কাউকেই সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করতে দেখা যায়না। এই পঞ্চায়তে ভোটেই হাতেখড়ি বলা যেতে পারে।
সামনেই ভোট। তাই এখন চরম ব্যস্ততা পাল পরিবারে। শুরু হয়ে গিয়েছে দেওয়াল লিখন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তিন দলের তিন প্রার্থী প্রচারও শুরু করে দিয়েছেন। তবে প্রচারে খানিকটা এগিয়ে রয়েছেন সিপিএম প্রার্থী কাকা সন্ন্যাসী পাল। তিনি বলেন, কোলাঘাটের এই আশুরালী গ্রাম বরাবরই সিপিএমের দখলে। তাই বামেদের জয়ের ধারাকে ধরে রাখতে তিনি প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আশাবাদী দুই ভাইপোকে হারিয়ে তিনিই জিতবেন এবারের ভোটে।
পাশাপাশি তৃণমূল প্রার্থী শান্তনু পালের দাবি, জিতবেন তিনিই। দিদির উন্নয়নের জোয়ার তাঁর জয় আনবে। অন্যদিকে আর এক ভাইপো বিজেপি প্রার্থী উত্তম পালের দাবি, রাজ্য সরকারের লাগাম ছাড়া দুর্নীতি, বেকারত্বই তাঁর জয় আনবে পঞ্চায়েত নির্বাচনে। ব্যবসার ফাঁকে ফাঁকে তিন প্রার্থীই বাড়িবাড়ি গিয়ে প্রচার করছেন।
প্রসঙ্গত, পাল পরিবারের মোট ২২টি ভোট রয়েছে। এই ভোট কোন দিকে যেতে পারে তা নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে তৃণমূল প্রার্থী শান্তনু পাল বলেন, ‘ভোট আমরা আলাদা দলের হয়ে দাঁড়ালেও, বাড়িতে কোনও বিবাদ নেই। আমাদের বাড়িতে ২২টা ভোট আছে। কে কাকে ভোটে দেবেন তাঁরা নিজেরাই ঠিক করবেন।’
তবে, আশুরালী গ্রামে তেমনভাবে নেই রাজনৈতিক উত্তাপ। তবে টক্কর রয়েছে প্রচারে। লড়াই ভিন্ন দলের হয়ে হলেও তিন প্রার্থীরই একটাই বক্তব্য, শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হোক পঞ্চায়েত নির্বাচন। রাজনীতির ময়দানে যেই জিতুক, কোনভাবেই হিংসার রেশ পরিবার বা গ্রামের মানুষের মধ্যে যাতে না পড়ে, সেই আবেদনই তিন দলের প্রার্থীর। কে জিতবেন তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আর কয়েকটা দিন। এলাকায় পঞ্চায়েত ভোটে চর্চায় এখন আশুরালী গ্রামের পাল পরিবার।