কালিয়াচক: পাঁচ পাঁচজনকে প্রধান করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা তোলার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতির বিরুদ্ধে। কালিয়াচকের গয়েশবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘটনা। অভিযোগ, তৃণমূলের গয়েশবাড়ি অঞ্চল সভাপতি মিরাজুল বোসনি ও তাঁর ছেলে প্রধান পদে বসানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে কারও কাছে ১০ লক্ষ, কারও কাছে ১৫ লক্ষ, আবার কারও কাছে ৩০ লক্ষের বেশি টাকা তুলেছেন। টাকা নেওয়ার একটি ভিডিও ভাইরালও হয়েছে। যদিও সেই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করে দেখেনি উত্তরবঙ্গ সংবাদ। এদিন যিনি বেশি টাকা দিয়েছেন, তাঁকে প্রধান করতে গিয়ে ঝামেলা বাধে। এতে অন্যরা ক্ষুব্ধ হন। শাসকদলের বেশ কয়েকজন সদস্য ঘর থেকে বেরিয়ে যান। তাঁরা এই প্রধানকে মানবেন না বলে সংবাদমাধ্যমের কাছে বিবৃতি দেন। টাকা নিয়ে যাকে তাকে প্রধান করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন। এবিষয়ে মিরাজুল ও তাঁর ছেলের প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
গয়েশবাড়িতে মোট আসন ২৬টি। ভোটে তৃণমূল ১৪টি, কংগ্রেস ৯টি, সিপিএম দুটি ও আইএসএফ একটি আসনে জেতে। সিপিএমের এক নির্বাচিত সদস্য ভোটে জেতার পর তৃণমূলে যোগদান করেন। যার ফলে তৃণমূলের সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫।
তৃণমূলের নির্বাচিত সদস্য নেক খাতুনের অভিযোগ, ‘আমাকে প্রধান করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অঞ্চল সভাপতি মিরাজুল বোসনি ও তাঁর ছেলে ১০ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন। শুধু আমার কাছেই নয়। আরও চারজনের কাছ থেকে ১০ লক্ষ ১৫ লক্ষ করে টাকা নিয়েছেন। কিন্তু বাখরপুরের এক সদস্য প্রায় ৩৪ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। তাঁকে প্রধান করার জন্য আমাদের ভোট দিতে বলেন। সেকারণে আমরা ব্যালট পেপার ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছি।’
নেক খাতুনের আরও অভিযোগ, ‘পঞ্চায়েতের টিকিট দেওয়ার সময়ও অঞ্চল সভাপতি মিরাজুল বসনি কারও কাছে ৩ লক্ষ, কারও কাছে ৫-৬ লক্ষ করে টাকা আদায় করেছেন। এদিন গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের মধ্যে গণ্ডগোল বাঁধে। আমরা চারজন সদস্য সেখান থেকে বেরিয়ে যাই।’
যদিও এবিষয়ে মেরাজুল ও তাঁর ছেলের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তৃণমূলের গয়েশবাড়ি অঞ্চল সহ সভাপতি হোসেন আলি মণ্ডল মেরাজুল ও তাঁর ছেলের টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘যাঁদের থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে তাঁদের টাকা ফেরত দিতে হবে। টাকা নিয়ে পদ দেওয়াটা জঘন্য বিষয়। মানুষ প্রলোভনে পড়ে টাকা দিয়ে দিচ্ছেন।’ হোসেন আলি মণ্ডল আরও বলেন, ‘আমার স্ত্রীও নির্বাচিত সদস্য। তাঁকেও প্রধান করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। ১০ লক্ষের ওপরে টাকাও নিয়েছিল। কিন্তু একজন ৩৪ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। তাঁকেই প্রধান করা হয়েছে। এরকম অনৈতিক কর্মকাণ্ড মেনে নেওয়া যায় না।’
অন্যদিকে, এদিন বোর্ড গঠনের সময় বিরোধীদের কোনও কথা শোনা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। বিরোধীরা এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য আনজার আলি বলেন, ‘তৃণমূল সদস্যরা ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর কংগ্রেস সমর্থিত ১১ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তখন ভোটাভুটি করা হয়নি। বিরোধীদের অগ্রাহ্য করে অনৈতিকভাবে বোর্ড গঠন করা হয়েছে। আমরা এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করব।’