সুভাষ বর্মন, পলাশবাড়ি: মেজবিল মৌজায় বছর আশির শ্রীদাম দাসের ৭০ বছর ধরে বসবাস। দুই ছেলের বিয়ে দিয়েছেন। সংসার অনেকটাই বড়। কিন্তু বসতবাড়ি ও চাষের জমির অধিকার এখনও মেলেনি। দুয়ারে সরকার শিবিরে আবেদন করেও পাট্টা পাননি তিনি। শ্রীদাম শুধু একা নন, মেজবিল, পারপাতলাখাওয়া, গুদামটারি এলাকার এরকম পাট্টা না পাওয়া পরিবারের সংখ্যা শ-খানেক। এদের অধিকাংশই তৃণমূল সমর্থক। আর পাট্টা না থাকায় তাঁরা কৃষকবন্ধু, কেসিসির মতো প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন না। রবিবার আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকের পূর্ব কাঁঠালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের বালাসিপাড়ায় ভোটের প্রচার নিয়ে আলোচনা সভায় এসেছিলেন তৃণমূল নেতারা। তাঁরা এ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন।
প্রশ্নের মুখে পড়েই শাসকদলের নেতারা অবশ্য ভোটের পর আবেদনকারী বাসিন্দারা যাতে পাট্টা পান সেব্যাপারে সবরকমের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
আসলে পূর্ব কাঁঠালবাড়িতে অতীতের একাধিক নির্বাচনে বিজেপির থেকে ভোট কম পেয়েছে তৃণমূল। এখন গ্রাম পঞ্চায়েতটি বিজেপির দখলে। তাই এবার ভোট বাড়াতে সবরকমের চেষ্টায় রয়েছে শাসকদল। এজন্য ‘দুয়ারে তৃণমূল কর্মী’ কর্মসূচিও চলছে। আবার সাধারণ সমর্থকদের নিয়ে বুথভিত্তিক আলোচনা সভাও হচ্ছে।
রবিবার দুপুরে পারপাতলাখাওয়া, গুদামটারি, মেজবিল, বালাসিপাড়ার দলীয় সমর্থকদের নিয়েই গাছতলায় আলোচনা সভা চলছিল। সেখানে পাট্টার বিষয়টি তুলে ধরার জন্য আগে থেকে প্রস্তুত ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা। আর এদিনের সভায় তৃণমূলের পূর্ব কাঁঠালবাড়ি চেয়ারম্যান গৌতম সরকার, দলের অঞ্চল সম্পাদক প্রদীপ বর্মন, ১৩/২৫৩ নম্বর বুথ সভাপতি অমল বর্মন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। খোলামেলা আলোচনা চলাকালীন পাট্টার প্রসঙ্গ নিয়ে শ্রীদাম দাসের প্রশ্ন, ‘আমরা তৃণমূল দলটাই করি। অথচ আমিই দুয়ারে সরকার শিবিরে আবেদন করে এখনও তিন বিঘা জমির পাট্টা পাইনি।’ আরেক বাসিন্দা পুষ্পকান্ত বর্মন আবার দলেরই প্রাক্তন বুথ সভাপতি। তিনি ১৯৭৬ সালের নিজের বাবার নামের পুরোনো পাট্টা দেখিয়ে বলেন, ‘এই পাট্টা এখন নাকি বাতিল। নতুন আবেদন করে মেমো নম্বরও পেয়েছি৷ কিন্তু পাট্টা মেলেনি।’ একইভাবে পাট্টা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অজিত সরকার, অভিজিৎ সরকার, নিরলা নার্জিনারি, অনুপা সাংমা, নীলিমা খালকো তিরকির মতো আরও অনেকে। সবাই তৃণমূল করেন বলেই আলোচনা সভায় উপস্থিত হন। অভিজিৎ সরকারের কথায়, ‘পাট্টা নেই বলে আমরা কেউই ব্যাংক ঋণ পাচ্ছি না। অথচ সব নথিপত্র জমা দেওয়া হয়। সরেজমিনে আমিনও জমি পরিদর্শন করেন।’
এই পরিস্থিতিতে আশ্বাস দেওয়া ছাড়া নেতাদের বলার মতো কিছু ছিল না। তৃণমূলের সংশ্লিষ্ট অঞ্চল চেয়ারম্যান গৌতম সরকারের কথায়, ‘এইসব এলাকার প্রায় একশো পরিবার পাট্টার দাবি জানিয়েছে। বিষয়টি এতদিন সেভাবে জানা ছিল না। আর আবেদনকারী অধিকাংশই আমাদের দলের সমর্থক। এখন ভোটের আচরণবিধি চালু আছে। তাই ভোট পার হলে সবাই যাতে পাট্টা পান সেজন্য দলীয়ভাবে সবরকমের সহযোগিতা করা হবে।’ একই আশ্বাস অন্য নেতারাও দিয়েছেন।