প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান: মনোনয়ন জমাকে কেন্দ্র করে সোমবার অশান্তির পর মঙ্গলবার বর্ধমান ২ নম্বর ব্লকের বিডিও অফিস চত্বরেই সিপিএম নেতৃত্বের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করলেন তৃণমূল বিধায়ক নিশীথ মালিক। পাশাপাশি তাঁর বিধানসভা এলাকার সিপিএম নেতা সাগর মল্লিকের হাত ধরে নিশীথবাবুকে বলতে শোনা যায়, ‘মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে সোমবার যে অশান্তি হয়েছে তার জন্য আমি অনুতপ্ত ও ক্ষমাপ্রার্থী। এটা উচিৎ কাজ হয়নি। আমি থাকলে অশান্তি হতে দিতাম না। পুলিশ সক্রিয় হলে ওই ঝামেলা অশান্তি আটকানো যেত।’ পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণা হতেই রাজ্যজুড়ে অশান্তির বাতাবরণ। এমন আবহে তৃণমূল বিধায়কের এই সৌজন্য সাক্ষাত খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
কী ঘটেছিল সোমবার, যার জন্য সিপিএম নেতার কাছে ক্ষমা চাইতে হল তৃণমূল বিধায়ক নিশীথ মালিককে?স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার বর্ধমান ২ নম্বর ব্লকের বড়শুলে তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে সিপিএমের প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকদের সংঘাত বাধে। বেলা ১১টা ১৫-২০ মিনিট নাগাদ সিপিএম প্রার্থীদের নিয়ে দলীয় কর্মী-সমর্থকরা যখন বর্ধমান ২ বিডিও অফিসের দিকে যাচ্ছিলেন তখন তাঁদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। মনোনয়ন দাখিল করতে বাধা পেয়ে বাম কর্মী-সমর্থকরা প্রতিরোধে নামেন। দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ঘ শুরু হয়। সিপিএম কর্মীরা তৃণমূল কর্মীদের বাইকে বেপরোয়া ভাঙচুর চালান। তার পাল্টা তৃণমূল কর্মীদের ছোড়া ইটের আঘাতে সিপিএমের প্রার্থী, প্রস্তাবক সহ কয়েকজন জখম হন।
সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে রেহাই পাননি পুলিশ কর্মীরাও। বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মীও জখম হন। এই ঘটনায় ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করে মঙ্গলবার তাঁদের বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়। বিচারক ধৃত সকলেরই জামিন খারিজ করেছেন। বিধায়ক নিশীথ মালিক এদিন দাবি করেন, সংঘর্ষের ঘটনায় ধৃত ৯ জন তাঁর দলের কর্মী। তবে এদিন বামেদের মনোনয়ন নিয়ে কোনও অশান্তির ঘটনা ঘটেনি। অবাধেই বাম প্রার্থীরা মনোনয়ন দাখিল করেন।
অন্যদিকে, তৃণমূল বিধায়কের ক্ষমা চাওয়া প্রসঙ্গে সিপিএম নেতা সাগর মল্লিক বলেছেন, ‘তৃণমূল বিধায়ক সত্যটা স্বীকার করেছেন। সেটাকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু তৃণমূল বিধায়ক কী উদ্দেশ্যে এদিন বিডিও অফিসে উপস্থিত হয়েছিলেন সেটা আমরা বুঝতে পারলাম না। তবে সোমবার আমাদের যেভাবে আটকানো হয়, মারধর করা হয় তাতে আমাদের মনোবল একটুও কমেনি। বরং বেড়েছে। ভোটের দিনেও বাম প্রার্থী ও কর্মীরা একই মনোবল নিয়ে ময়দানে থাকবেন।’
জেলা বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র তৃণমূল বিধায়কের ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘তৃণমূল বিধায়কের সিপিএম নেতার কাছে ক্ষমা চাওয়ার পিছনে অবশ্যই রাজনৈতিক কৌশল রয়েছে। লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে হয়তো ওই কৌশল তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বরই তৈরি করে দেওয়া। ভোট কাটাকাটির গেম প্ল্যান হিসেবে তৃণমূল নেতা ও বিধায়করা এখন সিপিএমকে তোল্লাই দিচ্ছেন। বাংলার মানুষ তৃণমূলের এই কৌশল সম্বন্ধে অনেক আগে থেকেই অবগত।’