কলকাতা: ফ্ল্যাট দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগ, এই মুহূর্তে সংবাদ শিরোনামে তৃণমূল সাংসদ তথা অভিনেত্রী নুসরত জাহান। নুসরতের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ এনেছিলেন বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা। এই নিয়ে মুখ খুলেছিলেন নুসরতও। বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে সেই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন তিনি। কিন্তু সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্নের উত্তর দেননি সাংসদ। সম্প্রতি কলকাতায় একটি অনুষ্ঠানে যশ দাশগুপ্তর সঙ্গে দেখা যায় নুসরতকে। সেখানে এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে প্রথমে এড়িয়ে যান তিনি। প্রশ্ন করা হয়, ইডি ডেকে পাঠালে কী করবেন অভিনেত্রী? অবশেষে তার উত্তরে নুসরত বলেন, ‘এর জন্য ইডি আমায় ডাকবে না।’ শুরুটা অবশ্য যশই করেন। তিনি বলেন, ‘কে কী বলছে যায় আসে না। আদালত যেটা বলবে সেটাই শেষ পর্যন্ত মানতে হবে। আমাদের আদালত কী জবাব দেয়, তার জন্য অপেক্ষা করা উচিত। তারপর না হয় আমরা উত্তর দেব।’
প্রসঙ্গত, নুসরতের বিরুদ্ধে প্রায় ২৪ কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে সোমবার ইডির দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা। পরে রাজ্যের বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও সেই অভিযোগকে সমর্থন করেন। বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা বেশ কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তিকে নিয়ে ইডি অফিসে যান। সেখানে তাঁরা অভিযোগ দায়ের করে জানান, ২০১৪ সালে ৪২৯ জনের কাছ থেকে ফ্ল্যাট দেওয়ার নাম করে টাকা নিয়েছিল নুসরতের সংস্থা। রাজারহাটে হিডকোর দপ্তরের কাছে তিন বছরের মধ্যে এই ফ্ল্যাট দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রায় ১০ বছর হতে চললেও সেই ফ্ল্যাট তাঁরা পাননি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেন, বিরাট দুর্নীতি হয়েছে। ওই টাকায় ১ কোটি ৫৫ লক্ষ দাম দিয়ে ফ্ল্যাট কিনেছেন নুসরত। অভিযোগের যথেষ্ট সারবত্তা রয়েছে। ইডিকে সব তথ্য দিয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছে। ইডি পদক্ষেপ না করলে তাঁরা মামলার পথে হাঁটবেন।
যে নাগরিকেরা ইডি-র কাছে গিয়েছিলেন, তাঁরা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে জানিয়েছেন, নুসরতের সঙ্গে ওই সংস্থার যৌথ ডিরেক্টর রাকেশ সিংহ নামের এক ব্যক্তি। তিনিই ফ্ল্যাট পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রতারিতরা গড়িয়াহাট থানায় অভিযোগও দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদকে গ্রেপ্তারের দাবিও জানান শঙ্কুদেব। তবে এই অভিযোগকে স্বাভাবিকভাবেই উড়িয়ে দেয় তৃণমূল। তাঁদের দাবি, কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে বিরোধী শাসিত রাজ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। অভিযোগ ওঠার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কলকাতার প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে নুসরত বলেন, ‘আমি ব্যাখ্যা দিতে আসিনি। ব্যাখ্যা তাঁরা দেয়, যাঁরা ভুল করেছে এবং ভয় পায়।’ দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে তিনি বলেন, ‘যে সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, তাদের থেকেই ঋণ নিয়েছিলাম। সেই টাকায় বাড়ি কিনেছি। ১ কোটি ৪০ লক্ষ ১৭ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছি কোম্পানিকে। ব্যাংকের নথিও আমার কাছে আছে। চ্যালেঞ্জ করতে পারি, যে আমি দুর্নীতিতে যুক্ত নই। আমি এক পয়সা নিলে এখানে আসতাম না।’
সাংবাদিক বৈঠকের প্রথম থেকেই সংবাদমাধ্যমের প্রতি আক্রমণাত্মক ছিলেন নুসরত। তিনি জানান, সংবাদমাধ্যম ‘হাফ বেকড’ স্টোরি করছে। তাঁদের কোনও খবর করার সময় সব দিকটাই দেখা উচিত। যদিও মিনিট সাতেকের সাংবাদিক সম্মেলনে দৃশ্যতই উত্তেজিত নুসরত সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনও জবাব দিতে চাননি। শুধু নিজের কথা বলে তড়িঘড়ি সাংবাদিক বৈঠক ত্যাগ করেন তৃণমূল সাংসদ। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই।
তবে নুসরতের সাংবাদিক বৈঠকের পরও বহু প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। তিনি সেভেন সেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার নামে ওই কোম্পানির ডিরেক্টর পদে থাকাকালীন যে টাকা সংগৃহীত হয়েছে তার দায় তিনি কী করে এড়াচ্ছেন সেই প্রশ্নের জবাব মেলেনি, তেমনই থানায় অভিযোগ দায়ের, এমনকি আদালতে মামলা হওয়ার পরও একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেননি কেন সেই প্রশ্নও উঠেছে।