পূর্ণেন্দু সরকার, জলপাইগুড়ি: সরকারি খাতায় রেজিস্টার্ড পরিযায়ী শ্রমিকদের তালিকা নিয়ে বাড়ি বাড়ি জনসংযোগে নামল তৃণমূল কংগ্রেস। তথ্য বলছে, সরকারি সামাজিক প্রকল্পে রেজিস্টার্ড পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছে ৩৩ হাজার ৬৬৯টি পরিবার। সেই হিসেব কমবেশি দেড় লক্ষাধিক ভোট নিজেদের পক্ষে আনতেই এই অভিনব প্রচার শুরু করল তৃণমূল। বেশি করে ধূপগুড়ি, ময়নাগুড়ি, নাগরাকাটা, মেটেলি, জলপাইগুড়ি সদর ও ক্রান্তি এবং মালবাজার ব্লকে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। চা বাগান থেকে গ্রামাঞ্চল এলাকায় পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে তৃণমূল। যদিও সরকারি এই রেজিস্টার্ড তালিকার বাইরে আরও অনেক পরিযায়ী শ্রমিকের পরিবার নাম নথিভুক্ত করেনি।
দুয়ারে সরকারের ৭ নম্বর ক্যাম্প থেকে জেলার পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম রেজিস্টার্ড করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। শ্রম দপ্তরের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় এনে পরিযায়ী শ্রমিকদের পোর্টালে নাম আপলোড করা হয়েছে। ময়নাগুড়ি ব্লকেই সবচেয়ে বেশি পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছেন। এই সংখ্যাটা ৬ হাজার ৯৩ জন, ধূপগুড়ি ব্লকে ৫ হাজার ৭১৫ জন৷ ক্রান্তি ব্লকে ৪ হাজার ৮১১ জন, জলপাইগুড়ি সদর ব্লকে ৪ হাজার ২০ জন, মালবাজার ব্লকে ৩ হাজার ৭৪৬ জন, নাগরাকাটায় ২ হাজার ৩৮৯ জন, মেটেলিতে ১ হাজার ৯৯০ জন, রাজগঞ্জ ব্লকে ১ হাজার ৯২৩ জন পরিযায়ী শ্রমিক নাম নথিভুক্ত করেছেন। পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারই ক্যাম্পে এসে নাম নথিভুক্ত করেছে।
তৃণমূল এই সরকারি তালিকা নিয়েই আলাদা টিম তৈরি করেছে। সাধারণ প্রচারের বাইরে শুধুমাত্র পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ধরে ধরে তাঁদের পরিবারের কাছে গিয়ে শ্রম দপ্তরের নতুন প্রকল্পের বিষয়ে বোঝাচ্ছেন। বাড়ির সদস্যরা রাজ্য সরকারের সম্প্রতি দেওয়া বকেয়া ১০০ দিনের কাজের মজুরির টাকা পেয়েছেন কি না, বাড়ির মহিলারা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ছাড়াও অন্য সদস্যরা কী কী সরকারি প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করছেন তা নিয়েও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। কারও প্রকল্প পেতে কী সমস্যা তা নথিভুক্ত করে রাখা হচ্ছে। নির্বাচনি বিধি উঠে যাওয়ার পর সেই পরিবারের সমস্যা যাতে মেটানো যায় তা জানান তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী মহুয়া গোপ।
পরিযায়ী শ্রমিকদের অধিকাংশই যাতে ভোট দিতে বাড়ি ফেরেন সেই বিষয়ে বোঝানো হচ্ছে। অনেক বাড়ি থেকেই জানানো হয়েছে ১৭ তারিখের মধ্যেই অনেকে বাড়ি ফিরবেন। অনেকে ফিরতে পারবেন না বলেও পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে। অনেকে ট্রেন ও প্লেনের টিকিট পাচ্ছেন না বলেও পরিবারকে জানিয়ে দিয়েছে। সেই পরিবারের মাধ্যমে ফোনে পরিযায়ী শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলছে তৃণমূলের টিম।
জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বেরুবাড়ির এক পরিযায়ী শ্রমিকের আত্মীয় দীগেন বর্মন বলেন, ‘চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে বাড়িতে এসে নিজের ভোট দিয়ে যায়।’
বিজেপির জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামীর কথায়, এই জেলায় কাজের সুযোগ নেই। তাই শিক্ষিত তরুণরা ভিনরাজ্যে চলে যাচ্ছেন। আমরাও তাঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কেন বিজেপিকে ভোট দেবেন তা বোঝাচ্ছি।
তৃণমূল মহিলা কংগ্রেস সভানেত্রী নুরজাহান বেগম বলেন, ‘আমরা বাড়ির মাধ্যমে পরিযায়ী শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলছি। তাঁদের বোঝাচ্ছি ভোট দেওয়াটা কেন জরুরি।’