নাগরাকাটা: লক্ষ্য লোকসভা নির্বাচন। ফের ডুয়ার্সজুড়ে শিবির করে সাংগঠনিক ক্লাস শুরু করতে চলেছে শাসক দল প্রভাবিত তৃণমূল চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়ন। ডুয়ার্সের চা বলয়ের একাধিক ব্লককে একসঙ্গে নিয়ে একেকদিন ওই কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বীরপাড়ায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব একটি বৈঠক করে বিভিন্ন জায়গার শিবিরের নির্ঘন্ট তৈরি করেন। বিভিন্ন বাগানের ইউনিট কমিটিগুলির নেতা-কর্মীরা ওই শিবিরগুলিতে যোগ দেবেন। শুরু হবে ১৯ ডিসেম্বর। সেদিন নাগরাকাটা, মেটেলি ও বানারহাট এই ৩ ব্লকের চা বাগানের শ্রমিকরা শিবিরে যোগ দেবেন। জায়গা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে নাগরাকাটার আদিবাসী সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রকে। উপস্থিত থাকবেন তৃণমূল কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি’র রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০ ডিসেম্বর শিবির হবে মাদারিহাটে। সেখানে কালচিনি, ফালাকাটা ও মাদারিহাট এই ৩ ব্লকের চা বাগানের নেতা-কর্মীরা যোগ দেবেন। ২১ ডিসেম্বর কুমারগ্রাম, আলিপুরদুয়ার ১ ও আলিপুরদুয়ার ২ নম্বর ব্লকের বাগানগুলিকে নিয়ে শিবির হবে কুমারগ্রামে। ২২ ডিসেম্বর মালবাজার, ক্রান্তি ও জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বাগানগুলিকে নিয়ে শিবির হবে মালবাজারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিটি শিবিরে চা শ্রমিক আন্দোলনের ইতিবৃত্ত, আইনসম্মত পাওনাগন্ডা, শ্রম আইনের নানা দিক, ন্যূনতম মজুরি, কাজের পরিধি সহ আরও নানা খুঁটিনাটির ওপর ক্লাস নেবেন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। রাজ্য সরকার চা শ্রমিকদের জমির পাট্টা প্রদানের যে প্রকল্পটি চালু করেছে তার ইতিবাচক নানা দিকের কথাও তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি তৃণমূলের ওই চা শ্রমিক সংগঠনটি বিভিন্ন বাগানের বকেয়া থাকা পিএফের বিষয়টিকে নিয়ে নতুন করে পিএফ দপ্তরের বিরুদ্ধে আন্দোলন শানানোর কৌশলও হাতে নিয়েছে।
তৃণমূল চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বীরেন্দ্র বরা ওরাওঁ জানান, এ ধরনের ক্লাস বা সেমিনারের সবচেয়ে বড় উপকারিতা হল শ্রমিকদের মধ্যে তাঁদের অধিকার সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা তৈরি হবে। যুক্তিসম্মত ও আইনি দাবিদাওয়ার কথা মালিকদের কাছে তাঁরা পরিষ্কার তুলে ধরতে পারবে। এর বাইরে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে চা বাগানের শ্রমিকদের পাট্টা প্রদানের ঐতিহাসিক প্রকল্প চালুর পাশাপাশি পাট্টা প্রাপকদের বাড়ি তৈরির জন্য ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা প্রদানের যে ভাবনার কথা খোদ মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে গিয়েছেন সেকথা একদম নীচুতলায় পৌঁছে দেওয়াই তাঁদের উদ্দেশ্য। সংগঠনের চেয়ারম্যান নকুল সোনার বলেন, ‘প্রতিটি বাগানের সমস্যার ধরন আলাদা। সেসবও শিবিরে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের কাছ থেকে জেনে নিয়ে সেই মোতাবেক সাংগঠনিক পদক্ষেপ করা হবে।’ এদিন তৃণমূল চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রবীন রাই, সহ সভাপতি সঞ্জয় কুজুর প্রমুখ।
একদিন করে ওই ক্লাস হচ্ছে। হাজির থাকছেন সংগঠনের পোড়খাওয়া শীর্ষ নেতারা। গত ৩০ অগাস্ট বীরপাড়ায় মাদারিহাট ও ফালাকাটা ব্লককে দিয়ে কর্মসূচিটি শুরু হয়েছে। ২ সেপ্টেম্বর হয়েছে কালচিনি এলাকার বাগানগুলিকে নিয়ে। ৫ তারিখ হবে কুমারগ্রাম, আলিপুরদুয়ার ১ ও আলিপুরদুয়ার ২ নম্বর বাগানগুলিকে নিয়ে। ৬ সেপ্টেম্বর মালবাজারে। সেখানে কালিম্পংয়ের কয়েকটি বাগানের প্রতিনিধিদেরও ডেকে নেওয়া হবে। নাগরাকাটায় হবে ৮ তারিখ। মেটেলির সম্ভাব্য তারিখ ১২ সেপ্টেম্বর।
চা মহল জানাচ্ছে, বর্তমানে চা বাগান বেশকিছু পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। যেমন আগে ৩ বছরের চুক্তির মাধ্যমে মজুরি বাড়ত। তবে কয়েক বছর ধরে রাজ্যের অ্যাডভাইজারির মাধ্যমে প্রতি বছর মজুরি বাড়ছে। সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারির পর উঠে এসেছে চা শ্রমিকদের জমির পাট্টার বিষয়টি। অবসরপ্রাপ্ত চা শ্রমিকদের পাট্টা দেওয়ার জন্য উত্তরবঙ্গের চা উৎপাদক জেলাগুলির প্রশাসনকে বাগানগুলির উদ্বৃত্ত বা অব্যবহৃত জমির সমীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর। সেই মোতাবেক কিছু কাজ শুরু হয়েছে। তবে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন সহ বেশ কিছু সামাজিক সংগঠন শুধু অবসরপ্রাপ্তদের নয়। সমস্ত চা শ্রমিকরা বাগানের যেখানে বংশ পরম্পরায় বসবাস করে আসছেন সেই জমিরই পাট্টা প্রদানের দাবিতে সরব হয়েছে। পাশাপাশি কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের একটি রায় অনুযায়ী ন্যূনতম মজুরির হার ৬ মাসের মধ্যে রাজ্যের ঠিক করে ফেলার কথা। আন্দোলন চলছে মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া ডাবলি চুক্তি নতুন করে সম্পাদন করারও। বিষয়টিকে নিয়ে মালিকপক্ষ দু-একটি বৈঠক ডাকলেও কোনও সমাধান সূত্র এখনও বের হয়নি। তৃণমূল চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক ক্লাসে সমস্ত কিছুই শ্রমিক প্রতিনিধিদের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে। নকুল সোনার বলেন, ‘এসব তো আছেই। এর বাইরে বাগানে শ্রমিকদের কাজের বেশকিছু পদও রয়েছে। যেমন সিটিসি অ্যাটেন্ডেন্টের কথা বলা হয়। এসব নিয়ে অনেকেরই পরিষ্কার ধারণা নেই। সবকিছুই আমরা বিশদে তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করছি।’