সায়নদীপ ভট্টাচার্য, বক্সিরহাট: এ ঠিক যেন নিজ ভূমে পরবাসী। বছরের পর বছর ধরে প্রতিবেশী রাজ্যে অসমের প্রার্থীদের ভাগ্য নির্ধারণ করে আসছেন বাংলার বাসিন্দারা। শুনতে খানিকটা অবাক লাগলেও এমনটাই ঘটে আসছে তুফানগঞ্জ-২ (Tufanganj) ব্লকের ফলিমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব ফলিমারি ও জয়গুরু গ্রামে।
মঙ্গলবার তৃতীয় দফা নির্বাচনে (Lok Sabha Election 2024) প্রতিবেশী রাজ্য অসমে ভোট দেবেন জেলার পূর্ব ফলিমারির বাসিন্দা পেশায় স্কুল শিক্ষক ওয়াজেদ হুসেন, ব্যবসায়ী আক্তার প্রামাণিক।
আক্তার, ওয়াজিদই শুধু নয়, রাত পোহালেই অসমে ভোটের লাইনে দাঁড়াবেন পূর্ব ফলিমারি ও জয়গুরু গ্রামের প্রায় দেড়শো পরিবার।
সোমবার গ্রামের অনেকের বাড়িতেই ঝুলছিল তালা। অনেকেই ভোটকেন্দ্র দূরে থাকায় একদিন আগেই বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে সপরিবারে চলে গিয়েছেন আত্মীয়ের বাড়িতে। সেখান থেকেই সকাল সকাল ভোট দিয়ে আবার ফিরে আসবেন।
অসমের (Assam) ভোটার পূর্ব ফলিমারির বাসিন্দা ফরিদ মোঘল। তিনি বলেন, ‘ছোট থেকেই লেখাপড়া করেছি অসমের স্কুলে। বাজারে ওষুধের দোকান রয়েছে আমার। তাই মাঝেমধ্যেই আমাকে কোকরাঝাড় জেলায় যাতায়াত করতে হয়। তাই সেখানেই ভোটের তালিকায় নাম তুলে নিয়েছি।’
প্রাক্তন স্কুল শিক্ষক ওয়াজেদ হুসেনের বসত ভিটে পূর্ব ফলিমারি হলেও ছোটবেলাতে অসমে লেখাপড়া করেছিলেন। তাই ৩২ বছর কোকরাঝাড় জেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। অবসর নিয়ে বাড়িতেই ফিরে বাজারে একটি দোকান খুলে বসেছেন। তাঁর ছেলে মেয়েরাও অসমেই পড়াশোনা করছেন।
তিনি বলেন, ‘আমার ব্যাংক সহ প্রয়োজনীয় নথিপত্র অসমে রয়েছে। তাই আর ভোটার কার্ড স্থানান্তরিত করার প্রয়োজন হয়ে ওঠেনি।’
বক্সিরহাট থানার অন্তর্গত তুফানগঞ্জ-২ ব্লকের রায়ডাক ও সংকোশ নদীবেষ্টিত প্রত্যন্ত গ্রাম পূর্ব ফলিমারি। নদী ও অসম সীমানা গ্রামটিকে ব্লক ও জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি গ্রামে। তুফানগঞ্জ-২ ব্লকের বাকি অংশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে হয় নদীপথে ও সড়কপথে অসমের দীর্ঘ রাস্তা ঘুরে।
প্রত্যন্ত এলাকার ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া হোক কিংবা চিকিৎসা, বাজারঘাট বাসিন্দাদের ভরসা প্রতিবেশী রাজ্য অসম। এমনকি প্রয়োজনীয় কাজে তুফানগঞ্জ-২ বিডিও অফিসে যাতায়াত করতে দীর্ঘ কাঁচা পথ ও দুটো নদী ডিঙিয়ে যাতায়াত করতে হয় পূর্ব ফলিমারি ও জয়গুরু এলাকার বাসিন্দাদের। তাতে মাটি হয়ে যায় গোটা দিনটাই। অথচ দুই মিনিট হাঁটলেই পৌঁছানো যায় অসমে। তাই বাংলার বাসিন্দা হয়েও ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে অধিকাংশই কোকরাঝাড়, আবার কেউ ধুবড়ি জেলার ভোটার তালিকায় নাম তুলে নিয়েছেন। অনেকেই আবার অসমে চাকরিও পেয়ে গিয়েছেন।
এই নিয়ে পূর্ব ফলিমারি পঞ্চায়েত সদস্য আবু সায়েদ মণ্ডল বলেন, ‘প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ার দরুন পূর্ব ফলিমারি গ্রামে বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা। গ্রামের প্রত্যেকের ছেলেমেয়েরা অসমে স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করছে। তাই বাংলার বাসিন্দা হয়েও অনেকেই অসমে ভোটার কার্ডে নাম তুলে নিয়েছেন।’