নীহাররঞ্জন ঘোষ, মাদারিহাট: খয়েরবাড়ি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্র (Khayer Bari Tiger Rescue Centre) থেকে শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি (Siliguri Bengal Safari) পার্কে পাড়ি দিল দাবাং ও ইভা। এরা দুজনেই প্রেমিক-প্রেমিকা। খয়েরবাড়ির বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে এবার অন্তরঙ্গভাবে জীবনযাপন করার সুযোগ পেতে চলেছে এই চিতাবাঘ (Leopard) জুটি। মঙ্গলবার বিকেলে দুজনকে বিদায় জানাতে গিয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না এতদিন ধরে দুজনের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা বনকর্মী পার্থ সিনহা ও চিকিৎসক উৎপল শর্মা। এদিন বিদায়ের আগে দুজনকে সযত্নে স্নান করানো হয়। খেতে দেওয়া হয় তিন কিলোগ্রাম করে গোরুর মাংস। এরপর পশু চিকিৎসক উৎপল শর্মা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন দুজনের। সব শেষে জলদাপাড়ার বনাধিকারিক সন্দীপকুমার বেরোয়ালের উপস্থিতিতে দুজনকে পাঠানো হয় বেঙ্গল সাফারি পার্কে। উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল ভাস্কর জেভি জানান, ‘দাবাং নামে একটি সাত বছর বয়সি মর্দা চিতাবাঘ এবং ইভা নামে একটি পাঁচ বছর বয়সি মাদি চিতাবাঘকে মঙ্গলবার শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্কে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।’
বন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, মাত্র দুই বছর বয়সে দাবাং-কে উদ্ধার করে আনা হয়েছিল কার্সিয়াংয়ের ডাউহিল এলাকা থেকে। ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত ডানপিটে ও মস্তান প্রকৃতির ছিল বলে তৎকালীন সহকারী বন্যপ্রাণ সংরক্ষক বিমল দেবনাথ তার নাম দিয়েছিলেন দাবাং। আর ইভা-কে ছয় মাস বয়সে উদ্ধার করে আনা হয় নীলপাড়া রেঞ্জের বিচ চা বাগান থেকে। জলদাপাড়ার তৎকালীন বনাধিকারিক কুমার বিমল তার নাম দিয়েছিলেন ইভা। তখন থেকেই দুজনকে পিতৃস্নেহে লালনপালন করে আসছিলেন বনকর্মী পার্থ সিনহা। চিকিৎসার ভার সামলেছেন পশু চিকিৎসক উৎপল শর্মা। তাই এদিন দাবাং ও ইভার বিদায়লগ্নে দুজনের মনই ছিল ভারাক্রান্ত।
জু অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধি সৌরভ চৌধুরী জানান, খয়েরবাড়ি থেকে দাবাং ও ইভা নামের দুটি চিতাবাঘকে যেমন শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারিতে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে, তেমনি বেঙ্গল সাফারি থেকে এক জোড়া বাঘ ও বাঘিনী সহ আরও এক জোড়া চিতাবাঘকে পাঠানো হচ্ছে ত্রিপুরার সিপাইজুলা চিড়িয়াখানায়। বেশ কিছু পাখিও সেখানে পাঠানো হবে। অন্যদিকে, ত্রিপুরা থেকে এক জোড়া সিংহ ও সিংহীকে বেঙ্গল সাফারিতে আনা হবে। আর আনা হবে লেপার্ড ক্যাট ও বেশ কয়েকটি চশমামুখো হনুমান। এরাজ্যের কোথাও ওই ধরনের চশমামুকো হনুমান নেই বলেও তিনি জানান। তিনি আরও জানান, বেঙ্গল সাফারি থেকে একজোড়া চিতাবাঘ পাঠানো হবে বর্ধমান ও গড়চুমুক চিড়িয়াখানাতেও। ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাবে।