সুবীর মহন্ত, বালুরঘাট: একসময়ের বাম দুর্গ গতবারই দখল নিয়েছে তৃণমূল। এবার সেখানে প্রভাব বেড়েছে বিজেপিরও। এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে এবার আসন পুনরুদ্ধার করার চ্যালেঞ্জ রয়েছে আরএসপি প্রার্থী লিপি বর্মনের সামনে। কিন্তু তাঁর এই লড়াইয়ে কাঁটা তাঁরই পরিবারের এক সদস্য। লিপি বর্মনের জা রুম্পিতা মণ্ডল এবার কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়েছেন। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন নিজের পরিবারের সদস্যই। সাংসারিক আঙিনা পেরিয়ে রাজনীতির ময়দানে জমে উঠেছে ভোটের লড়াই।
বালুরঘাট ব্লকের বোয়ালদার গ্রাম পঞ্চায়েতের বোয়ালদার গ্রামের ১৯০ নম্বর বুথে দুই জা’র লড়াই এখন সকলের নজর কাড়ছে। যদিও দুই জা একই সুরে বলছেন সম্পর্ক সম্পর্কের জায়গায়, ভোটের লড়াই ময়দানে। পরিবারের সম্পর্ক পরিবারে থাকবে ভোটের ময়দানে থাকবে শুধু রাজনৈতিক সম্পর্ক।
বালুরঘাট ব্লকের বোয়ালদার গ্রাম পঞ্চায়েত দীর্ঘদিন বামেদের দখলে থাকার পর দখল যায় তৃণমূলের হাতে। যদিও ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই পঞ্চায়েত ত্রিশঙ্কু অবস্থায় ছিল। জোড়াতালি দিয়ে পঞ্চায়েত সামলেছে তৃণমূলই। বামেরা এই বোয়ালদার গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষমতা হারালেও, বোয়ালদার গ্রাম সংসদে সিপিএম ও আরএসপি দুই শরিকের পৃথক লড়াই সর্বজনবিদিত। প্রায় প্রতিবারই এই আসনে দুই দলেরই প্রার্থী একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। তবে এবার আসন পুনর্বিন্যাসের জেরে এই সংসদের দুটি আসন হওয়ায় আরএসপি সিপিএমের পুরোনো গোলমালও মিটে গিয়েছে। এবার দুই শরিক দুই আসনে সমঝোতা করে প্রার্থী দিয়েছে। ১৯১ বুথে সিপিএমের প্রার্থী থাকলেও, ১৯০ বুথে বামেদের হয়ে আরএসপি প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন। এই এলাকায় বাম শরিকদের ঐক্য এবারে সুদৃঢ় হওয়ায়, এই এলাকায় জোর বেড়েছে বামেদেরও। এর মধ্যে তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী রানা মহন্ত তৃণমূল ছেড়ে আরএসপিতে যোগ দিয়েছেন। তাঁর স্ত্রী লিপি বর্মনই এবার এলাকার বামপ্রার্থী। লিপি বর্মনের কাকাতো জা রুম্পিতা মণ্ডল এবার কংগ্রেসের হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছেন।
গ্রামবাসীরা মজার সুরে বলছেন, একই পরিবারের দুই জা’র মধ্যে কেউ একজন জিতবে। যেই জিতুক আমরা আনন্দ করব। দুই জা’র ভোটে জেতার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে বড় জা আর এসপিপ্রার্থী লিপি বর্মন বলেন, ‘আমরা বরাবর গ্রামের মানুষের পাশে থেকেই কাজ করি। আমার স্বামী তৃণমূল যখন করতেন তখনও মানুষের হয়ে কাজ করতেন । গতবার তৃণমূল ও বিজেপি হাত ধরাধরি করেই বোয়ালদার পঞ্চায়েতের দায়িত্ব সামলেছে। বিজেপি থেকে জেতা এক সদস্য তৃণমূলের সমর্থনে প্রধান হয়েছিলেন। তাঁরা মানুষের মুখ দেখে, গরিবদের বঞ্চিত করে কাজ করেছে। তাই আমরা তৃণমূল থেকে বেড়িয়ে এসেছি।’ অন্যদিকে, ছোট জা রুম্পিতা মণ্ডল বলেন, ‘আমার শ্বশুরমশাই সন্তোষ মহন্ত এলাকার পুরোনো কংগ্রেস কর্মী। আমি তাঁর মতাদর্শেই বিশ্বাসী। তাই এবার কংগ্রেসের হয়ে প্রার্থী হয়েছি। আমার জা অন্য দল থেকে ভোটে দাঁড়ালেও, আমাদের পারিবারিক সম্পর্কে তা কোনও প্রভাব ফেলবে না।’