কলকাতা: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় যে রিপোর্ট কর্তৃপক্ষ পাঠিয়েছিলেন, তাতে এবার ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। রবিবারই এ প্রসঙ্গে একটি রিপোর্ট চাওয়া হয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে। যাদবপুর কর্তৃপক্ষ সোমবার সেই রিপোর্ট পাঠানোর পর দাবি করেছিল, তাঁদের পাঠানো তথ্যে ইউজিসি ‘সন্তুষ্ট’। তবে বৃহস্পতিবার ফের যাদবপুর কর্তৃপক্ষের কাছে ১২টি প্রশ্নের জবাব সহ বিভিন্ন তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে ইউজিসি। পাশাপাশি এও জানানো হয়েছে, আগের পাঠানো রিপোর্টে তারা ‘সন্তুষ্ট’ নন। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তথ্য সহ সমস্ত প্রশ্নের জবাব জানাতে বলা হয়েছে। নইলে কড়া পদক্ষেপেরও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
সূত্রের খবর, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসুকে লেখা এক চিঠিতে ইউজিসি জানিয়েছে, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র্যাগিংয়ে রাশ টানতে ২০০৯ সালে কমিশন কিছু নীতি চালু করেছে। সেই নীতির শর্তগুলি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মানছেন কিনা। এছাড়া কর্তৃপক্ষের কাছে ইউজিসির তরফে জানতে চাওয়া হয়েছে…
১) ভর্তির সময়ে পড়ুয়াদের যে ‘ব্রোশিওর’ দেওয়া হয়েছিল, তাতে র্যাগিং বিরোধী হেল্পলাইন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং বিরোধী সংগঠনের নম্বর রয়েছে কিনা? সেই ‘ব্রোশিওর’ পাঠাতে হবে। ২) র্যাগিং বিরোধী হেল্পলাইন, প্রতিষ্ঠানের প্রধান, ওয়ার্ডেন, র্যাগিং বিরোধী কমিটি, পুলিশের নম্বর লেখা যে ‘লিফলেট’ বিলি করা হয়েছিল সেই ‘লিফলেট’ পাঠাতে হবে। ৩) র্যাগিং প্রতিরোধে শাস্তিমূলক যে ব্যবস্থা রয়েছে, তা পড়ার পর একটি হলফনামায় সই করার কথা পড়ুয়াদের। সেই হলফনামার প্রতিলিপি কর্তৃপক্ষের কাছে থাকলে তা জমা করতে হবে। ৪) পড়ুয়াদের পাশাপাশি অভিভাবকদের সই করা হলফনামার প্রতিলিপি কর্তৃপক্ষের কাছে থাকলে তাও পাঠাতে হবে। ৫) যাঁরা হস্টেলে থাকবেন, সেইসব পড়ুয়ার অতিরিক্ত হলফনামায় প্রতিষ্ঠান সই করিয়েছিল? তাঁদের অভিভাবকদেরও কি অতিরিক্ত কোনও হলফনামায় সই করানো হয়েছিল? সেইসব তথ্য পাঠাতে হবে। ৬) মৃত পড়ুয়া এবং তাঁর পরিবার হস্টেলে থাকার জন্য অতিরিক্ত হলফনামায় সই করলে তার প্রতিলিপি পাঠাতে হবে।
৭) শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগে শিক্ষক, ছাত্রদের প্রতিনিধি, অভিভাবক, জেলা প্রশাসন, পুলিশের সঙ্গে কোনও বৈঠকে বসেছিলেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান? বসলেও তা কতক্ষণ, জানাতে হবে। ৮) ক্লাস শুরুর দু’সপ্তাহের মধ্যে নতুন ভর্তি হওয়া পড়ুয়া এবং পুরোনো পড়ুয়াদের কাউন্সিলিংয়ের কোনও ব্যবস্থা করা হয়ে থাকলে তার দিনক্ষণ জানাতে হবে। ৯) শিক্ষাবর্ষের শুরুতে নবীন সঙ্গে প্রবীণ পড়ুয়াদের পরিচয় করানোর জন্য কোনও অনুষ্ঠান হলে সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান উপস্থিত ছিলেন? তার তথ্য জানাতে হবে। ১০) নতুন ভর্তি হওয়া প্রত্যেক পড়ুয়ার সঙ্গে কথা বলার জন্য কোনও শিক্ষককে মনোনীত করা হয়েছিল কিনা? মৃত পড়ুয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার ভার কোন শিক্ষকের ওপর ছিল কিনা? তাঁর নাম জানাতে হবে। ১১) নতুন ভর্তি হওয়া পড়ুয়াদের কি হস্টেলের আলাদা ব্লকে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল? ওই ব্লকে কোনও সিনিয়র ছাত্র যাচ্ছেন কিনা, তা নজরে রাখার ব্যবস্থা ছিল? হস্টেলের ঘর বণ্টনের বিষয়ে বিশদে জানাতে বলা হয়েছে। ১২) ভর্তি হওয়ার পর পড়ুয়ারা র্যাগিংয়ের শিকার হচ্ছেন কিনা জানতে প্রথম তিন মাস ধরে প্রতি ১৫ দিন অন্তর কোনও সমীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে কিনা? এইসব প্রশ্নের জবাব আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইউজিসিকে জানাতে হবে কর্তৃপক্ষকে।