সমাপ্তির মুখে উমর খালিদের কারাবাস? ইঙ্গিত সুপ্রিম কোর্টের

নয়াদিল্লি: এক হাজার দিনেরও বেশি সময় জেলে কাটিয়ে অবশেষে কি মুক্তির আলো দেখবেন জেএনইউ-এর ছাত্র নেতা উমর খালিদ? বুধবার সুপ্রিম কোর্টে খালিদের তরফে দায়ের অন্তর্বর্তী জামিন সংক্রান্ত মামলার শুনানি পর্বে নিজেদের ব্যাখ্যা তুলে ধরতে গিয়ে তেমনই আভাস দিয়েছেন শীর্ষ আদালতের বিচারপতি এ এস বোপান্না এবং বিচারপতি এম এম সুন্দ্রেশের বেঞ্চ। দিল্লি দাঙ্গা মামলায় অভিযুক্ত, দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতা উমর খালিদ এদিন শীর্ষ আদালতে পুনরায় তাঁর অন্তর্বর্তী জামিনের জন্য আবেদন করলে বিচারপতি বোপান্না এবং সুন্দ্রেশের বেঞ্চে তা গৃহীত হয় তথা আগামী ২৪ জুলাই খালিদের জামিনের আর্জি শুনানির দিন ধার্য করেন। বুধবার শীর্ষ আদালতের অভিমত জানতে পেরে দিল্লি পুলিশের তরফে আইনজীবী রজত নায়ার বলেন, ‘চার্জশিট তৈরি হতে দেরি হচ্ছে। পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তনির্ভর প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট মামলায় ইতিমধ্যে হাজার পাতার চার্জশিট তৈরি হয়েছে। প্রভূত পরিমাণ কর্মব্যস্ততার জন্য পূর্ণাঙ্গ চার্জশিট দাখিলে সময় লাগছে।’ এক্ষেত্রে শীর্ষ আদালতে বাড়তি সময় চান আইনজীবী নায়ার। দিল্লি পুলিশের এই বক্তব্য খণ্ডন করে উমর খালিদের আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেছেন, ‘অভিযুক্ত বিচারাধীন ব্যক্তি ইতিমধ্যেই দু বছর জেলে কাটিয়েছেন। তারপরেও দিল্লি পুলিশ চার্জশিট দাখিল করতে পারছে না। কিসের এত কর্মব্যস্ততা?’ দিল্লি পুলিশের এই বক্তব্য নাকচ করে দেন বিচারপতিরাও। বিচারপতি বোপান্না বলেন, ‘সেদিন কাজের চাপ বাড়বে না কমবে তা আমরা বুঝে নেব। কিন্তু ২৪ জুলাই হবে পরবর্তী শুনানি।’ ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করে বেঞ্চ জানায়, ‘সে দিন হয়তো এক থেকে দু মিনিটের মধ্যে এই মামলার নিস্পত্তি হবে।’ শীর্ষ আদালতের এই পর্যবেক্ষণ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে বিভিন্ন মহল।

সম্প্রতি, দিল্লির তিহাড় জেলে কারাজীবনের হাজার দিন পূর্ণ করেছেন উমর খালিদ। ২০২০-এর ফেব্রুয়ারি মাসে দিল্লিতে দাঙ্গা বাধানোর অভিযোগে উমর খালিদকে গ্রেফতার করেছিল দিল্লি পুলিশ। হিংসাত্মক ওই ঘটনায় ৫৩ জনের মৃত্যু হয়। গুরুতর জখম হয়েছিলেন ৭০০ জন। ওই বছরেরই সেপ্টেম্বর মাসে দিল্লি পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে এবং ইউএপিএ ধারায় মামলা রুজু করে। এর আগে একাধিকবার বিভিন্ন আদালতে জামিনের আবেদন করেন নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। কিন্তু, বারবারই তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে যায়। তাঁর মুক্তির দাবিতে জওহরলাল নেহেরু সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা আন্দোলনেও নামেন। দিল্লির দাঙ্গার ঘটনায় খালিদ জড়িত ছিলেন না বলে দাবি করে নাগরিক সমাজের একাংশও। তাঁকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়। এদিকে দেখতে দেখতে হাজার দিন অতিক্রান্ত, প্রায় তিন বছর বিনা শুনানি, বিনা জামিনে কেটেছে কারাগারে। কিন্তু এই এক হাজার দিন হাত গুটিয়ে থাকেননি দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতা উমর খালিদ। তিহার জেলের ভেতরে শুরু করেছেন পড়াশোনা, পড়ে ফেলেছেন কয়েকশ বই, লিখেছেন অগুনতি কলাম, প্রতিবেদন, নিবন্ধ৷ এসব বিষয় নিয়ে আদালতও ওয়াকি বহাল বলে জানা গেছে আদালত সূত্রে। আগামী ২৪ জুলাই সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিচার করে শীর্ষ আদালত উমর খালিদকে জামিন দেয় কি না, এই মুহূর্তে সেদিকেই নজর রাখছে কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক মহল।