নকশালবাড়ি: হাইকোর্টে মামলা করতেই পানীয় জল পেল গোটা গ্রাম। দীর্ঘ তিন বছর ধরে পানীয় জলের পরিষেবা থেকে বঞ্চিত ছিল নকশালবাড়ি ব্লকের হাতিঘিসা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত সেবদেল্লা জোত। এই সেবদেল্লা জোতেই রয়েছে কানু সান্ন্যালের ভিটেমাটি। এলাকাটি কানু সান্ন্যালের গ্রাম নামেই পরিচিত। এই এলাকায় পিএইচই দপ্তর থেকে স্ট্যান্ডপোস্ট দেওয়া হলেও পানীয় জল আসত না। এভাবেই দীর্ঘ তিন বছর কেটে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা পানীয় জলের জন্য প্রথমেই হাতিঘিসা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, মহকুমা শাসককে জানায়। কিন্তু দীর্ঘদিন কেটে গেলেও কেউ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। শেষে স্থানীয়রা পানীয় জলের দাবিতে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি অরুণ ঘোষকে চিঠি দেয়। তাতেও কোনও সুরাহা হয়নি। সর্বশেষে দার্জিলিং জেলাশাসক, জলপাইগুড়ি বিভাগীয় কমিশনার, শিলিগুড়ি জনস্বাস্থ্য কারিগর দপ্তরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার এবং এই দপ্তরের মন্ত্রীকেও চিঠি দেয়। কিন্তু কেউ এই গ্রামে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়নি। ফলে দীর্ঘ তিন বছর ধরে মানঝা নদীর ঝোরার জল খেয়েই দিন কাটাতে হয় বাসিন্দাদের।
আদিবাসী অধ্যুষিত এই গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দাই দিনমজুর। এমন পরিস্থিতিতে জল কিনে খাওয়ার ক্ষমতা গ্রামের বাসিন্দাদের ছিল না। শেষে গ্রামের বাসিন্দারা চাঁদা তুলে পানীয় জলের দাবিতে হাইকোর্টে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেন। গ্রামবাসীদের হয়ে কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে জনস্বার্থ মামলা করেন স্থানীয় বাসিন্দা দীপু হালদার। চলতি বছরের ১০ মে পানীয় জলের দাবিতে রিট পিটিশন দাখিল করেন দীপু হালদার। গত ১২ জুন সেই পিটিশনের শুনানি হয় কালকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে। আদালত রাজ্য সরকারের কাছে তিন সপ্তাহের মধ্যে লিখিত জবাব চাইছেন কেন গ্রামে জল পৌঁছোয়নি। গ্রামবাসীদের পক্ষের আইনজীবি সন্দীপ মণ্ডল বলেন, ‘স্বাধীনতার এত বছর পরেও গ্রামবাসীদের পরিশ্রুত পানীয় জলের জন্য হাইকোর্টে যেতে হচ্ছে। আবার সেই কোর্টে দাড়িয়ে রাজ্য সরকারের আইনজীবী অমানবিকতার পরিচয় দিয়ে গ্রামবাসীদের দাবিতে আপত্তি তুলছেন। এটা খুবই দুর্ভাগ্য। ২০২০ লকডাউনের পর থেকেই সেই টিউবওয়েল থেকে জল আসা বন্ধ হয়ে যায়। প্রতি বছর তীব্র গরমে পানীয় জলের সমস্যায় ভুগতে হয় স্থানীয়দের।’
স্থানীয় বাসিন্দা দীপু হালদার জানান, পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে তাঁরা পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে বিডিও, এসডিও এবং জেলাশাসকের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন। বাড়ির পাশে সভাধিপতিকেও জানানো হয়। চিঠি নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলাস্তরের নেতাদের কাছেও গিয়েছিলাম। কিন্তু সেই আবেদনে সাড়া না পেয়ে শেষ পর্যন্ত কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করতে বাধ্য হয়। মামলা হতেই কয়েকদিন আগে পিএইচই দপ্তরের আধিকারিকরা ১৪টি পরিবারের বাড়িতে জল সংযোগ দিয়ে নলকূপ বসিয়েছেন। জলের সংযোগ পেয়ে খুশি গ্রামের বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দা ছোটন মুন্ডা বলেন, ‘এমনিতেই গ্রামটি পিছিয়ে পড়া। আদর্শ গ্রামের নামে এখানে কোনও কাজ হয়নি। স্থানীয় প্রশাসন আগেই কাজ করলে আমাদের আদালতে যেতে হত না।’