রায়গঞ্জঃ রায়গঞ্জ শহর থেকে ১৫ কিমি দূরে রয়েছে বিহারের বারসই জেলার আবাদপুর গ্রাম। চৌধুরী বংশধরদের শতাধিক বছরের পুরোনো কালীপুজোকে ঘিরে তৈরি হয় এক সম্প্রীতির আবহ। আজ রাতভর পুজো চলবে এবং আগামীকাল গ্রামে বসবে মেলা। মেলা শেষে হবে প্রতিমা নিরঞ্জন। আর এই প্রতিমা নিরঞ্জনকে কেন্দ্র করেই রয়েছে এক প্রাচীন রীতি। বিসর্জনের সময় গ্রামের ছেলেরা মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে মা কালীকে কাঁধে নিয়ে দৌড় শুরু করেন। পেছন পেছন মশাল নিয়ে ছুটতে থাকে হাজার হাজার মানুষ। কালী দৌড়কে ঘিরে তৈরি হয় সম্প্রীতির এক আশ্চর্য আবহ।
জানা গিয়েছে, আজ থেকে শতাধিক বছর আগে আবাদপুর গ্রামের চৌধুরী বংশধরেরা চালু করেছিলেন এই পূজা। আজও সেই প্রাচীন রীতি মেনে সারা গ্রাম শামিল হয় এই পুজোয়। তবে বিসর্জনের দিনে কালীকে কাঁধে নিয়ে দৌড়কে ঘিরে রয়েছে নানা কাহিনি। চৌধুরী বংশধরদের অন্যতম সদস্য মহাদেব কুমার চৌধুরী আবাদপুর গ্রামেই থাকেন। তবে অধিকাংশ শরিকেরা কর্মসূত্রে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় চলে গেলেও গ্রামে পুর্ব পুরুষদের বাড়ি রয়ে গেছে। প্রতি বছর কালী পুজোয় শামিল হন তাঁরা।
এই পুজো প্রসঙ্গে মহাদেব চৌধুরী বলেন, “এই পুজো সম্প্রীতির পুজো। আমরা পুজোর আয়োজন করলেও গ্রামের সমস্ত মানুষ পুজোর সময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। আজ সারা রাত ধরে পুজো হবে এবং ভোরের দিকে বলি হবে। বলি প্রথা এখনও রয়েছে এখানে।” তিনি আরও বলেন, আজ থেকে ৬০ বছর আগে দেখেছি গ্রামে অনেক পূজা হত, কিন্তু পুকুর ছিল একটি। তাই প্রতিমা নিরঞ্জনকে ঘিরে হুড়োহুড়ি হত। সেই সময় গ্রামের বিশিষ্টজনেরা প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। আজও সেই রীতি বজায় আছে। এই প্রতিযোগিতার নিয়ম ছিল দৌড়ের পর যাদের কালী প্রতিমা অক্ষুণ্ণ থাকবে, সেই প্রতিমারই প্রথম বিসর্জন হবে পুকুরে।
যদিও বর্তমানে নেই রাজা, নেই সেই রাজবৈভব। কিন্তু রাজার প্রচলিত রীতিনীতি আজও অব্যাহত আবাদপুরে। বিসর্জনের দিন পুজো কমিটি ও এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে কালী প্রতিমা কাঁধে নিয়ে ছুট দেন। আর সেই দৌড় দেখতে হাজির হন গ্রামবাসী। ঢাক-বাজনার সঙ্গে প্রতিমা ঘাড়ে করে সেই দৌড়কে ঘিরে উদ্দীপনা দেখা যায়। মন্দির থেকে কাঁধে করে কালীকে নিয়ে আবাদপুর এলাকা পরিক্রমা করার পর কালীবাড়ি লাগোয়া দিঘিতে নিরঞ্জন পর্ব সারা হয়। সোমবার মন্দির প্রাঙ্গণের পাশে মেলা বসবে। সন্ধ্যা হতেই মন্দিরে বিবাহিত মহিলাদের সিঁদুর পরানোর ঢল নামবে। রাত আটটা বাজতেই নিরঞ্জনের জন্য নেওয়া হয় প্রস্তুতি।