মালদা: ‘যাযাবর’। ছোটোবেলায় ইতিহাসের পাতায় শব্দটা কমবেশি সকলেই পড়েছেন। তবে শব্দটা এখন শুধু ইতিহাসের পাতায় সীমাবদ্ধ নয়। মালদা শহরেই এই শ্রেণির অস্তিত্ব রয়েছে। বর্ষার তিন-চার মাস ঘরছাড়া হয়ে থাকতে হয় এধরণের শতাধিক পরিবারকে। বর্তমানেও ঘরছাড়া হয়ে রয়েছেন মালদা শহরের নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা।
মহানন্দার দুই পাড়ে দুই শহর ইংরেজবাজার ও পুরাতন মালদা। ইংরেজবাজার পুরসভার একাধিক ওয়ার্ড রয়েছে নদী তীরে। নদীর তীরে বসবাস করেন বহু পরিবার। বছরের অন্যান্য সময় সমস্যা না থাকলেও বর্ষা আসতেই এই পরিবারগুলিকে সমস্যায় পড়তে হয়। নদীর জলস্তর বাড়তেই নদীর তীরে বসবাসকারী মানুষদের বাড়িতে জল ঢুকে পড়ে। অগত্যা বাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন মাঠে আশ্রয় নিতে হয় ওই পরিবারগুলিকে। মাস তিন-চারেক পর নদীর জল কমলে ফের ঘরে ফিরে যান পরিবারগুলি। চলতি বছর অগাস্ট মাসেই মহানন্দার জলস্তর বাড়তে শুরু করে। সেই সময় মহানন্দার জলস্তর পৌঁছে ছিল ১৯.১৮ মিটারে। জল বাড়িতে ঢুকে পড়ায় অরবিন্দ কলোনি, উত্তর বালুচর, মিশন ঘাট এলাকার একাধিক পরিবার ঘর ছেড়ে ওপরে উঠে আসেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নদীর জল খানিকটা কমলেও মরশুম শেষ না হওয়ায় কেউ ঘরে ফিরে যাননি।
এদিকে, গত শনিবার মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে সারা শহর জলমগ্ন হয়ে পড়ে। দুদিন ধরে শহরের জমা জল নামার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে মহানন্দার জলস্তর। সেচ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রবিবার দুপুর ১২টায় মহানন্দার জলস্তর ছিল ১৭.০৫ মিটার। সোমবার দুপুরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৯.৭০ মিটারে। মঙ্গলবার মহানন্দার জলস্তর ছিল ২০.৩০ মিটার। তারপরও ক্রমাগত বাড়ছে মহানন্দার জলস্তর।
আজ দুপুরে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে এসেছেন মিশন ঘাটের বাসিন্দা ভগবতী হাঁসদা। দুপুর থেকে রামকৃষ্ণ মিশন সংলগ্ন মাঠে অস্থায়ী ঘর গোছাতে ব্যস্ত তিনি। ভগবতীদেবী বলছেন, ‘গতকাল বাড়িতে জল ঢুকে যায়। আজ ঘর থেকে সমস্ত জিনিস বার করে এসেছি। জল না নামা পর্যন্ত মাঠের অস্থায়ী শিবিরেই আমাদের আশ্রয়। পুরসভা থেকে এই অস্থায়ী আশ্রয় তৈরি করা হয়েছে।‘
শিবিরে আশ্রয় নেওয়া আরেক মহিলা কাঞ্চন সাহা বলেন, ‘প্রায় ২৫ দিন আগে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে এসেছি। এখন এই মাঠের অস্থায়ী শিবিরেই আমাদের বসবাস। জল না নামা পর্যন্ত অর্থাৎ তিন-চার মাস এখানেই আমাদের থাকতে হবে। পুরসভা থেকে এই আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাদের বাড়িতে ইলেকট্রিক ছিল তাঁরা ২০০ টাকা দিয়ে এই অস্থায়ী শিবিরে ইলেকট্রিক আনতে পারেন। ফের ইলেকট্রিক কাটার সময়ে ২০০ টাকা দিতে হবে। প্রতি বছর বহু মানুষ অস্থায়ী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নেন। যাদের আর্থিক অবস্থা খানিকটা ভালো তাঁরা বাড়ি ভাড়া নিয়ে নেন। এভাবেই বছরের পর বছর আমাদের জীবন চলতে থাকে।‘