প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন দিল্লি পুলিশের অতি সক্রিয়তার জেরে বন্ধই হয়ে গেল দিল্লির বাম প্রশাসনিক কার্যালয় হরকিষণ সিং সুরজিত ভবনে অনুষ্ঠিত তিনদিন ব্যাপী ‘উই-২০’ সম্মেলন। রবিবার সকালে নিকটবর্তী ইন্দ্রপ্রস্থ পুলিশ স্টেশন থেকে বিরাট এক পুলিশ বাহিনী হানা দেয় অনুষ্ঠান স্থলে৷ সঙ্গে ছিল মধ্য দিল্লির ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশের তরফে এক বিশেষ অর্ডার পেপার, যেখানে বলা হয় আইন শৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা তথা অভ্যাগতদের ঠিকুজি কুলুজি যথাযথ কর্তৃপক্ষের তরফে দিল্লি পুলিশের কাছে পেশ না করায় দিল্লি হাইকোর্টের বিশেষ নির্দেশানুসারে অবিলম্বে এই অনুষ্ঠানের অনুমতি খারিজ করে তা দ্রুত বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দিল্লি পুলিশের এহেন সিদ্ধান্ত ঘিরে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ‘উই – ২০’ এর আয়োজকমণ্ডলী।
সেপ্টেম্বরে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হতে চলা ‘জি-২০’ সামিটের বিপক্ষে হেঁটে, সারা ভারতের একাধিক বাম মনোভাবাপন্ন সমাজসেবামূলক তথা মানব অধিকার রক্ষাকারী সংগঠনের তরফে দিল্লির দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গে সিপিএমের কার্যালয় হরকিষণ সিং সুরজিত ভবনে আয়োজন করা হয় ‘উই-২০’ সম্মেলন। শুক্রবার এই অনুষ্ঠানের সূচনায় অংশ নিয়েছিলেন তিস্তা সেতলবাদ-সহ বৃন্দা কারাত, মেধা পাটেকর, হর্ষ মন্দর, হান্নান মোল্লা, জয়তী ঘোষের মতো প্রথিতযশা ব্যক্তিত্ব তথা ভূ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা। তিন দিন ধরে চলা এই চিন্তন শিবিরে যোগ দেন দিল্লি এবং সারা দেশ থেকে আসা অসংখ্য মানুষেরা৷ কিন্তু শনিবার, আলোচনার দ্বিতীয় দিন থেকেই ছড়ায় উত্তেজনা, যখন দিল্লি পুলিশের বিরাট বাহিনী হরকিষণ সিং সুরজিত ভবনে হানা দেয় এবং অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ায় চেষ্টা চালায়৷ এ নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানান আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝাঁ, কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা জয়রাম রমেশ তথা মেধা পাটেকরের মতো ব্যক্তিত্বরা।
দিল্লি পুলিশের দাবি, অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য প্রয়োজনীয় পুলিশি অনুমতি নেয়নি ‘উই-২০’-এর আয়োজকেরা। একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের নিজস্ব পরিকাঠামো এবং পরিসরের ভিতরে, নিজস্ব প্রেক্ষাগৃহের মধ্যে কোনও অনুষ্ঠান পরিচালনা করতে কেন পুলিশের অনুমতি দরকার, সে নিয়ে আয়োজক এবং পুলিশ কর্তৃপক্ষের মধ্যে বচসাও হয়৷ তবু অনুষ্ঠানে শান্তিপূর্ণ ভাবে নির্বাহ করতে পুলিশের পরামর্শ মেনে অনুমতির জন্য দিল্লি পুলিশের কাছে আবেদন জানানো হয়৷ কিন্তু সেই আর্জি খারিজ করে দিল্লি পুলিশ। শনিবারের মতোই রবিবারও দিল্লি পুলিশের বিশাল বাহিনী দ্রুত পৌঁছে যায় হরকিষণ সিং সুরজিত ভবনে এবং বলপূর্বক অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। পরিস্থিতি অনুকূলে রাখতে সংগঠনের তরফে পুলিশের সিদ্ধান্ত মেনে নির্ধারিত সময়ের আগেই ‘উই-২০’ সম্মেলন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি বিশেষ প্রস্তাবনা (রেজলিউশন) পাস করানো হয়, যার দ্বারা দিল্লি পুলিশের এই স্বেচ্ছাচারী মনোভাবের তীব্র নিন্দা করা হয়৷ আয়োজকমণ্ডলীর তরফে জো আথিয়ালি জানান, ‘সরকারের এই ভূমিকা তীব্র নিন্দনীয়৷ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সভা বা সমাবেশ করার অধিকার সবার আছে৷ কেন্দ্রীয় সরকার এতটাই ভীত, শঙ্কিত যে জোর করে এই অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিল।’ আথিয়ালি এও বলেন, ‘উই ২০ অধিবেশন এখানেই শেষ নয়। এর পর এই অনুষ্ঠান রাজ্যে রাজ্যে জেলাস্তরে সংগঠিত হবে। ‘গণতন্ত্রের জননী’ বলে এই দেশকে যারা আখ্যা দেন তারা-ই আজ গণতন্ত্রকে হত্যা করলেন।’