নাগরাকাটা: ৪৫ বছরের বাম দুর্গে ঘাসফুল ফোটাল তৃণমূল। নাগরাকাটার আংরাভাসা এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এই প্রথম তৃণমূলের দখলে গেল। স্বাভাবিকভাবেই সিপিএমের হাত থেকে পঞ্চায়েত ছিনিয়ে নিতে পেরে উচ্ছ্বসিত রাজ্যের শাসক দল।
ডায়নার জঙ্গল ঘেষা প্রত্যন্ত আংরাভাসা গ্রাম পঞ্চায়েতে ‘লাল ঝান্ডা অপরাজেয়’ এমন মিথ ছড়িয়েছিল জলপাইগুড়ি জেলাজুড়েই। ২০১৮-র তৃণমূলি হাওয়ার মাঝেও এই পঞ্চায়েতে নিজেদের গরিষ্ঠতা ধরে রাখতে পেরেছিল সিপিএম। যদিও বোর্ডের দখল তৃণমূলই নিয়ে নেয়। জোর করে বোর্ড দখলের অভিযোগ এনে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে সিপিএম। কোর্টের নির্দেশে প্রশাসন ফের বোর্ড গঠনের সভা ডাকলে পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপপ্রধানের পদ সিপিএমই দখল করে। প্রধান পার্বতী ছেত্রী এলাকায় যথেষ্ট জনপ্রিয়। ২০১৩-১৮ পর্যন্ত তিনি ওই বোর্ডের উপপ্রধান পদে ছিলেন। সেসব পিছনে ফেলে এদিন তৃণমূল আংরভাসা এক পঞ্চায়েতে নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা অর্জন করে।
ওই পঞ্চায়েতের মোট আসন ৯টি। এর মধ্যে তৃণমূল জয়ী হয়েছে ৫টিতে। সিপিএমের ঝুলিতে গিয়েছে ৩টি। একটি আসন পায় বিজেপি। পার্বতী ছেত্রী পরাজিত হন তাঁর নিজের গ্রাম আপার কলাবাড়ির ১৮৭ নম্বর বুথ থেকে। সেখানে দুটি আসন ছিল। দুটিতেই তৃণমূলের গঙ্গা রাই ও প্রকাশ শর্মা নামে দুই প্রার্থী জয়ী হন। পার্বতীর সঙ্গে ওই আসন থেকে পরাজিত হন সিপিএমের রাজ কুমার প্রধানও। আংরাভাসা এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের কলাবাড়ি চা বাগানে সিপিএম অবশ্য তাঁদের প্রভাব অটুট রাখতে পেরেছে। সেখানকার ৩ টি আসনের মধ্যে ২ টিতে তাঁরা জয়ী হয়।
কী কারণে হাতছাড়া হল এই দুর্ভেদ্য দুর্গ? পার্বতী ছেত্রীর মূল্যায়ন, তৃণমূল এখানে ভয়ভীতি প্রদর্শনের রাজনীতি চালিয়েছে। পাশাপাশি তাঁদের সমর্থক এমন ৪০০ ভোটার পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে এখন বাইরে। তাঁরা ভোট দিতে আসতে পারেননি। ওই বাম নেত্রীর কথায়, ‘পরাজয় মাথা পেতে নিলাম। তবে আমাদের লড়াই জারি থাকবে। তৃণমূল এখানে যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা এবারে বাস্তবায়িত করুক।’ তৃণমূলের আংরাভাসা এক নম্বর অঞ্চল কমিটির সভাপতি পৃথ্বীরাজ ছেত্রী বলেন, ‘আসলে সিপিএমের আমলে এখানকার মানুষ উন্নয়ন কি তা জানেই না। খোদ প্রধানের গ্রামে পানীয় জলের সংকট রয়েছে। তাঁরা ৪৫ বছর থেকেও কিছু করতে পারেননি। মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের পক্ষেই রায় দিয়েছে।’