উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ বালেশ্বরের ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার পর কেটে গিয়েছে ১৫টা দিন। এখনও খোঁজ মেলেনি করমণ্ডলের চালকের। সে দিনের করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ট্রেনের চালক ছিলেন গুণনিধি মোহান্তি। তার ফেরার আশায় দিন গুনছেন তাঁর বাবা, ভাই, দাদা-সহ পরিবারের সকলে। যদিও এক চাঞ্চল্যকর দাবি করেছে ভুবনেশ্বরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল। তাঁদের দাবি, সপ্তাহখানেক আগেই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন গুণনিধি। তাহলে বর্তমানে তিনি কোথায়? এই প্রশ্নই ভাবাচ্ছে পরিবারের লোকেদের।
গত ২ জুন ওডিশার বালেশ্বরের কাছে বাহানগায় দুর্ঘটনার মুখে পড়েছিল আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেস, ডাউন বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস এবং একটি মালগাড়ি। বাহানগায় তীব্র গতিতে চলতে চলতে হঠাৎই লুপ লাইনে ঢুকে যায় করমণ্ডল এক্সপ্রেস। সেই লাইনেই ধীর গতিতে চলছিল একটি মালগাড়ি। দ্রুত গতিতে চলা করমণ্ডল সজোড়ে ধাক্কা মারে মালগাড়িকে। করমণ্ডলের ইঞ্জিন উঠে যায় মালগাড়ির একটি বগির ওপর। লাইন থেকে ছিটকে পাশের লাইনের ওপর পরে করমণ্ডলের একাধিক বগি। পাশের লাইন দিয়ে আসা হাওড়াগামী ডাউন বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসও লাইন চ্যুত হয়। ট্রেন দুর্ঘটনায় ২৯১ জন মারা যান, আহত হন ১১০০ জন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন সে দিনের করমণ্ডলের চালক গুণনিধিও। কিন্তু বর্তমানে তিনি কোথায় রয়েছেন, আপাতত তা জানা যায়নি।
দুর্ঘটনার খবর প্রকাশ্যে আসার পরেই করমণ্ডলের চালক কেমন আছেন, কোথায় রয়েছেন, তা নিয়ে একাধিক জল্পনা ছড়িয়ে পড়েছিল। রেল সূত্রে জানা যায়, আহত গুণনিধিকে ভুবনেশ্বরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, তাঁর পাঁজরের তিনটি হাড় ভেঙে গিয়েছে এবং মাথাতেও চোট রয়েছে। গুণনিধি আদৌ সেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন কিনা তা নিয়ে নিশ্চিত নয় পরিবারের লোকেরা। দুর্ঘটনার দু’দিন পর গুণনিধিকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন গুণনিধির ভাই রঞ্জিত মোহান্তি। অভিযোগ, তাঁকে আইসিইউ-এ ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তবে চিকিৎসকেরা তাঁকে জানিয়েছিলেন, বুকে রক্ত জমে গিয়েছে গুণনিধির। অসহ্য যন্ত্রণা হওয়ার কারণে তিনি কথা বলার মতো অবস্থায় নেই বলেও জানান চিকিৎসকেরা। গুণনিধির স্ত্রীকেও ভিতরে গিয়ে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত নন রঞ্জিত। তাঁর কথায়, “আমি নিশ্চিত নই যে, বৌদিকে ভিতরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, না কি দেওয়া হয়নি।” গুণনিধির দাদা, পেশায় আইনজীবী সঞ্জয় মোহান্তিও জানিয়েছেন যে, হাসপাতালে গিয়েও আহত ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি তিনি।
এদিকে, গুণনিধিকে চার-পাঁচ দিন আগেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে ভুবনেশ্বরের বেসরকারি হাসপাতালটি। ওই হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত এক চিকিৎসক এবং পদাধিকারী জানিয়েছেন, করমণ্ডল এক্সপ্রেসের আহত চালক এবং সহ-চালককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁরা কোথায়? গুণনিধির ভাই বলছেন, “আমরা হাসপাতালে এখনও অপেক্ষা করছি। আমাদের কেউ বলেনি যে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ছাড়া হলে তো সে আমাদের বাড়িতেই আসবে।”
এই বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে ইস্ট কোস্ট রেলও। ইস্ট কোস্ট রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বলেন, “স্বাস্থ্য মানুষের ব্যক্তিগত একটি বিষয়। আমরা এই বিষয়ে মন্তব্য করতে পারি না। দু’টি তদন্তকারী সংস্থা (সিবিআই এবং সিআরএস) দুর্ঘটনার তদন্ত করছে। আমরা এখনই এই বিষয়ে কিছু বলতে পারি না।”
কটক শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে নাহারপদ গ্রামে বাড়ি করমণ্ডলের চালক গুণনিধি মোহান্তির। এলাকায় গুণনিধিকে নিয়ে নানা গুঞ্জন চললেও তাতে কান দিতে চাইছেন না পরিবারের সদস্যেরা। দুর্ঘটনার পর থেকে চালক গুণনিধির পথ চেয়ে বসে আছেন তাঁর বৃদ্ধ বাবা বিষ্ণুচরণ মোহান্তিও। তিনি বলছেন, “সবাই ভাবছে, দুর্ঘটনার জন্য আমার ছেলেই দায়ী। ও ২৭ বছর ধরে ট্রেন চালাচ্ছে। কখনও কোনও ভুল করেনি।” দুর্ঘটনার পর ছেলের সঙ্গে এখনও অবধি কথা না হলেও, ছেলের ফেরার আশায় বসে রয়েছেন তিনি।