উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর্যালোচনা বৈঠকে বিজেপির রাজ্য সভাপতির সঙ্গে মতবিরোধে জড়িয়ে পড়লেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সামনেই চাঁচাছোলা ভাষায় সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং জেতা আসন হারা নিয়ে আওয়াজ তুললেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি। বোঝাতে চাইলেন রাজ্য নেতৃত্বের জন্যই এমন পরাজয়। সবটা হজম করা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। সংগঠনকে মজবুত করার বার্তা দিতে আগামী ১৯ জুলাই কলকাতায় মহামিছিল করার সিদ্ধান্ত নেয় রাক্য বিজেপি। এই বৈঠকে চার কেন্দ্রীয় নেতা সুনীল বনসল, মঙ্গল পাণ্ডে, অমিত মালব্য এবং আশা লাকড়া উপস্থিত ছিলেন।
গত ২১ মে রাজ্য বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠকে রাজ্যে সংগঠনের হাল নিয়ে সরব হয়েছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ। রবিবার সল্টলেকের দলীয় কার্যালয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে খারাপ ফল হল কেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন দিলীপ ঘোষ। জেতা জায়গায় পরাজয় এবং নির্বাচনের দিন এজেন্টদের বুথ ছেড়ে আগে বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে সোচ্চার হন মেদিনীপুরের সাংসদ। বৈঠকে উপস্থিত এক বিজেপির নেতা বলেন, ‘আমি যখন বৈঠকে ছিলাম তখনই দিলীপদা রাজ্য নেতৃত্বের ত্রুটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। রাজ্য নেতারা এবং জেলা নেতারা সঠিক ভূমিকা পালন করেছিলেন কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তাতেই সরগরম হয় বৈঠক।’
২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে দিলীপ ঘোষ ছিলেন রাজ্য সভাপতি থাকাকালীন পশ্চিমাঞ্চলে গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রথম জয়ের মুখ দেখেছিল বিজেপি। তার জেরে তৃণমূলের একাধিক মন্ত্রীকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছিল তৃণমূল। সেখানে এবার বিপর্যয় কেন? উওরবঙ্গ, ঝাড়গ্ৰামে ফলাফল খারাপ হল কেন? প্রশ্ন তোলেন দিলীপ। প্রশ্ন তুলে সংগঠন দুর্বল বলে সুর চড়ান তিনি।
দিলীপ এই প্রশ্ন তুলতেই চড়া সুরে পালটা দেন সাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের তুলনায় ২০২৩ সালে পঞ্চায়েতের আসন বেড়েছে বিজেপির। তখন পাল্টা দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘২০১৮ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বাম, কংগ্রেস, বিজেপি সবাই দ্বিগুণ আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছে। সবারই আসন তাই বেড়েছে। এতে হাতিঘোড়া কিছু প্রমাণ হয় না। বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় বিজেপির ভোট যে ৩৮ শতাংশ থেকে কমে ২২ শতাংশ হয়েছে সেটাই বাস্তব ঘটনা’। এমনই সুর চড়িয়েছেন তিনি বলে সূত্রের খবর।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরে বিজেপি সব মিলিয়ে ৬৫৭০টি আসনে জিতেছিল। ২০২৩ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে ১১ হাজারের একটু বেশি হয়েছে। আবার এলাকা পুনর্বিন্যাসের কারণে এবার ১৫ হাজারেরও বেশি আসনও বেড়েছে। তাই তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে, পাঁচ বছরের ব্যবধানে বিজেপির সাফল্য–ব্যর্থতায় বিরাট হেরফের হয়নি। বরং ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজেপি ২ কোটি টাকা খরচ করেছিল, এবার খরচ করেছে প্রায় ৫২ কোটি। ২৫ গুণ বেশি খরচ করেও ফল তলানিতে বলে সূত্রের খবর।