উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: আদালতের নির্দেশ না মানায় সোমবার প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পালকে আদালতে সশরীরে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এদিন তড়িঘড়ি হাইকোর্টে হাজিরও হয়েছিলেন পর্ষদ সভাপতি। তাঁকে দেখতে পেয়েই এদিন স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে নজিরবিহীনভাবে তাঁর বেতন বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন বিচারপতি। এরপরই কার্যত ভেঙে পড়েন গৌতম পাল। তিনি করজোরে জানান, তাঁর বাড়িতে ৮০ বছরের বৃদ্ধ মা রয়েছে, তিনিই একমাত্র রোজগেরে, বন্ধ করবেন না বেতন। ঠিক এ ভাষাতেই বিচারপতিকে অনুরোধ করেন গৌতম পাল। যদিও বিচারপতি গৌতমবাবুকে নির্দেশ কার্যকর করার জন্য বাড়তি ২ সপ্তাহ সময় দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের টেট পরীক্ষায় বসেছিলেন এক চাকরিপ্রার্থী। প্রাথমিকভাবে মামলাকারী জানতে পারেন, তিনি ওই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হননি। যদিও পরে জানা যায়, তিনি টেট পরীক্ষায় পাশ করেছেন। ২০২০ সালে সেই পরীক্ষার জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। উত্তীর্ণ হয়েছেন জানতে পারার পরেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মামলাকারী। তখনই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতিকে নির্দেশ দেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মামলাকারীকে যত দ্রুত সম্ভব ইন্টারভিউতে ডাকতে হবে।
কিন্তু ৭ জুন আদালতের সেই নির্দেশের পরেও ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ায় ডাক পাননি ওই চাকরিপ্রার্থী। এরপরেই ফের হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। সোমবার সেই মামলার শুনানিতে পর্ষদের আইনজীবী জানান, এ ব্যাপারে ইতিমধ্যেই ডিভিশন বেঞ্চে মামলা হয়েছে। কিন্তু কবে, সেটা জানাতে পারেনি পর্ষদ। তাছাড়া মামলার নম্বরও বলতে পারেননি তিনি। এরপরেই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পালকে আপিলের নথি নিয়ে দুপুর ৩টের সময় আদালতে হাজিরা দিতে নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সেই মতোই তড়িঘড়ি এদিন কলকাতা হাইকোর্টে হাজিরা দেন পর্ষদ সভাপতি। সেখানেই প্রথমে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁকে ডিভিশন বেঞ্চে দায়ের করা মামলার নম্বর জানতে চান। সূত্রের খবর, সেই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর ছিল না গৌতম পালের কাছে। এরপরেই অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, তিনি গৌতম পালের বেতন বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে পর্ষদকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করেন তিনি।
কিন্তু বেতন বন্ধের কথা শুনে এজলাসের ভিতরেই কার্যত ভেঙে পড়েন গৌতম পাল। হাত জোড় করে প্রায় কেঁদে ফেলার উপক্রম হয় তাঁর। পর্ষদ সভাপতি জানান, আমি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করি।’ আরও জানান, তিনিই পরিবারের একমাত্র রোজগেরে, বাড়িতে বৃদ্ধা মা রয়েছেন। তিনি অসুস্থ, চিকিৎসা চলছে। এরপরেই তাঁকে শান্ত হতে বলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য তিনি গৌতম পালকে ৫ মিনিট সময়ও দেন। আলোচনা শেষে ফের এজলাসে ঢুকে গৌতমবাবু জানান, ‘(আগের) অনেক নির্দেশ মেনেছি। আমরা আগামী নিয়োগ প্রক্রিয়াতে সুযোগ দেব (ওই প্রার্থীকে)। ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন প্রত্যাহার করে নেব।’ যদি মামলাকারী যোগ্য হয় তাহলে আগামী নিয়োগে সুযোগ দেওয়া হবে তাঁকে, জানান গৌতম পাল। সূত্রের খবর, পর্ষদ সভাপতির আবেদন মেনে নিয়ে এক সপ্তাহ নয়, বরং আদালতের নির্দেশ কার্যকর করার জন্য গৌতমবাবুকে ২ সপ্তাহ সময় দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।