উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: সন্তান যখন গর্ভে আসে, তখন থেকে আশপাশের শুভাকাঙ্ক্ষীদের হাজারো পরামর্শে একটি মেয়ে নিজেকে ভুলতে শুরু করে। অনেক মেয়েরই মনে হয়, আমি বোধহয় ভালো মা হতে পারব না, আমি বাচ্চার প্রতি পুরোপুরি মন দিতে পারছি না, আমি ছাড়া সবাই বাচ্চার ভালো বোঝে। এসব নানা চিন্তাই মাথায় আসে। হরমোনের পরিবর্তন এবং শারীরিক কারণে এই অবস্থাটা ধীরে ধীরে অবসাদে পৌঁছে যায় এবং সন্তান জন্মের পর তা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। এই অবস্থাই হল মাতৃত্বকালীন অবসাদ বা পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন (পিপিডি)।
এই অবস্থায় মাতৃত্বকালীন অবসাদ মোকাবিলায় প্রথম ওষুধে অনুমোদন দিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)। এতদিন পিপিডির চিকিৎসা হিসেবে শুধুমাত্র আইভি ইনজেকশনই ছিল। ফলে অনেক নতুন মা-ই এই ইনজেকশন নিতে তেমন আগ্রহ দেখাতেন না। তবে এখন আর ইনজেকশন দেওয়ার ঝক্কি থাকবে না বলে জানিয়েছেন এফডিএ-র মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের ডিরেক্টর টিফানি আর ফারশিয়োন। এফডিএ জানিয়েছে, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মাতৃত্বকালীন অবসাদের চিকিৎসার জন্য জুরানোলোন প্রথম খাওয়ার ওষুধ। এর ক্লিনিকাল ট্রায়াল সফল হয়েছে। ওষুধটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগে দেখা গিয়েছে, মানসিক অস্থিরতা অনেকটাই কমেছে। এরপরই ওষুধটি বাজারে আনার ছাড়পত্র দিয়েছে এফডিএ।
পিপিডির উপসর্গের মধ্যে রয়েছে বিষণ্ণতা, আত্মঘাতী ভাবনা, আনন্দ অনুভব করার ক্ষমতা কমে যাওয়া, আচরণগত তারতম্য, হিংসাত্মক মনোভাব ইত্যাদি। বিশেষজ্ঞদের মতে, সন্তান জন্মের পরে পিপিডির উপসর্গ দেখা যায়। আটজনের মধ্যে একজন মহিলার এই সমস্যা হয় এবং ৭৫ শতাংশ মহিলাই কোনও চিকিৎসা করান না। অনেকের ক্ষেত্রে এই ধরনের মানসিক অবসাদ এতটাই গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছোয় যে, সদ্যোজাত সন্তানকেও শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।
যাই হোক, নতুন এই ওষুধটি মাত্র দুই সপ্তাহে অন্যান্য অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্টের তুলনায় দ্রুত কাজ করে। এছাড়া বর্তমানে ব্যবহৃত অন্যান্য অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্টের তুলনায় এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কম। ওষুধটি সেই সব মহিলার জন্য উপকারী হতে পারে যাঁদের মাতৃত্বকালীন অবসাদ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।