গাজোল: সংসার চালানোর জন্য এলাকার বহু মানুষ কাজের খোঁজে যান ভিন রাজ্যে। কাজে গিয়ে অনেক শ্রমিক বেঘোরে প্রাণও হারিয়েছেন। তবে এবার একটু বেশি রোজগারের আশায় ভিন রাজ্যে নয় একেবারে দুবাইয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন গৌড়বঙ্গের বেশকিছু শ্রমিক। যে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেখানে গিয়ে সেই কাজ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। দেওয়া হয় অত্যন্ত নিম্নমানের কাজ। সেই কাজ করতে অস্বীকার করায় শ্রমিকদের ভিসা এবং পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে তাদের আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদার সংস্থার বিরুদ্ধে। ঘটনায় আটকে রয়েছেন গাজোলের চাকনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের শিসা পিড়ালুতলা গ্রামের এক শ্রমিকও। স্বাভাবিকভাবেই চরম আতান্তরে পড়েছে ওই শ্রমিকের পরিবার। সরকারের কাছে কাতর আর্জি জানিয়েছেন তাঁকে ফিরিয়ে আনার জন্য। বিষয়টি জানতে পেরে তদন্ত শুরু করেছে গাজোল থানার পুলিশও।
আটকে থাকা ওই শ্রমিকের নাম পূর্ণেন্দু বৈরাগী (৪৩)। পূর্ণেন্দুবাবুর ভাই বিকাশ বৈরাগী জানান, দুবাইয়ে শপিংমলে কাজ দেওয়া হবে। বেতন দেওয়া হবে মাসে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। এই আশ্বাসে গ্রামের এক ব্যক্তি নৃপেন বিশ্বাসের মাধ্যমে পূর্ণেন্দু রওনা দেন দুবাইয়ের উদ্দেশে। পাসপোর্ট, ভিসা সহ অন্যান্য খরচ বাবদ নৃপেন বিশ্বাসের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। চলতি মাসের পয়লা তারিখে বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রথমে কলকাতা যান পূর্ণেন্দু। সেখান থেকে যান মুম্বই। ৫ তারিখ মুম্বই থেকে রওনা দেন দুবাইয়ের উদ্দেশে। দুবাইয়ে পৌঁছোনোর পরেই তাঁদের পাসপোর্ট, ভিসা কেড়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। যে কাজের নাম করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেই কাজ না দিয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করানোর জন্য চুক্তিপত্রে সই করানো হয় তাঁদের। স্বাভাবিকভাবেই সেই কাজ করতে না চাওয়ার জন্য বর্তমানে তাদের গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। এই খবর জানার পর থেকেই পরিবারের সকলেই একেবারে ভেঙে পড়েছেন। পূর্ণেন্দুর সঙ্গে রয়েছে গঙ্গারামপুরের দু’জন এবং ইটাহারের একজন শ্রমিক। এছাড়াও আটকে রাখা হয়েছে এ রাজ্যের আরও প্রায় ১৫ জন শ্রমিককে। পরিবারের তরফে সরকারের কাছে কাতর আর্জি জানানো হয়েছে তাঁদের ফিরিয়ে আনার জন্য।
পূর্ণেন্দুবাবুর মা পুষ্পরানি বৈরাগী জানান, সামান্য যে সোনা ছিল সেগুলি বিক্রি করে এবং যে যৎসামান্য জমি ছিল সেটিও বিক্রি করে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা দিয়ে ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন বাড়তি কিছু রোজগারের আশায়। বিষয়টি নিয়ে নৃপেন বিশ্বাস জানান, পাকুয়াহাটের দীপক নামে এক এজেন্টের মাধ্যমে তাঁদের দুবাইয়ে পাঠানো হয়েছিল। বিষয়টি জানার পর থেকেই দীপকের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন তিনি। তাকে পরিষ্কার বলা হয়েছে, আটকে রাখা পূর্ণেন্দু সহ অন্যান্যদের যেন অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। গাজোল থানার বড়বাবুর সঙ্গেও এবিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। জানা গিয়েছে, বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার আটকে থাকা শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। গৃহবন্দি শ্রমিকরা কতদিন পর দেশে ফিরতে পারেন তার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।