নাগরাকাটাঃ ডায়নার ভাঙনে বিপন্ন হয়ে পড়েছে নাগরাকাটার ধরণীপুর চা বাগান। সেখানকার দুটি সেকশনের একাংশ ইতিমধ্যেই নদী গর্ভে চলে গেছে। পানিঘাটা নামে একটি শ্রমিক মহল্লার বাসিন্দারা আগামী বর্ষার কথা চিন্তা করে এখন থেকেই অন্যত্র সরে যেতে শুরু করেছেন। নদী বর্তমানে ওই এলাকার গাঁ ঘেষে বইছে। নিজেদের বিপদের কথা নানা মহলেও জানিয়েও কোন কাজ হয় নি বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভের পারদও ক্রমশ চড়ছে সেখানে। নাগরাকাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সঞ্জয় কুজুর অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, এব্যাপারে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের করা হবে।
ভুটান থেকে নেমে আসা ডায়না নদী বরাবরই খরস্রোতা। লালঝামেলা বস্তী হয়ে ওই নদী নাগরাকাটায় ঢুকেছে। উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত ডায়না ক্রমশ পূর্ব দিকে সরে আসার কারনেই এই বিপত্তি বলে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন। ময়নাগুড়ির ব্লকের ডোববাড়িতে জলঢাকার সঙ্গে মেশার আগে মাত্র ২৫ কিলোমিটারের মত ডায়না নদী ধরণীপুরের পাশাপাশি ফি বছরের আতঙ্কের কারণ খেরকাটা গ্রাম, কলাবাড়ি বস্তী, মাঝিয়ালি বস্তীর মত আরো একাধিক জনপদেরও। ডায়না নিয়ে বিস্তর অনুসন্ধান চালিয়েছেন বানারহাট হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুকল্যাণ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ভুটানের সামচি জেলার যে যে পাহাড়ি ঢাল থেকে ডায়না লালঝামেলার দিকে নেমে এসেছে তা অত্যন্ত খাড়া। যে কারনে এই নদীর ক্ষিপ্রতা অন্য নদীর থেকে অনেক বেশি। পাশাপাশি যে স্থানে জাতীয় সড়কের ওপর ডায়নার ওপর সেতু তৈরি করা হয়েছে তা বিজ্ঞানসন্মত হয় নি বলেই আমার ধারনা। এসব মিলিয়েই নদী ভাঙন মারাত্মক আকার ধারন করেছে।
ধরণীপুর চা বাগানের স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন সেখানকার ২৫ ও ২৬ নম্বর সেকশন দুটির বেশিরভাগ অংশেরই এখন আর কোন চিহ্ন নেই। চা আবাদী ওই এলাকার প্রায় পুরোটাই নদীর আগ্রাসনের শিকার। নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে বন দপ্তরের নজরদারির একটি ডিপো। বর্তমানে পানিঘাটা নামে যে শ্রমিক মহল্লাটিতে নদীর মতিগতি দেখে আতঙ্ক ছড়িয়েছে সেখানে বেশ কিছু পরিবারের বাস।
রাজকাপুর কর্মকার নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, বর্ষা কালে গোটা তল্লাট রাতের বেলা দু চোখের পাতা এক করতে পারে না। বেশ কিছু পরিবার ভয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছে। দ্রুত নদীতে পাড় বাঁধ তৈরি কিংবা ডাইভারসন জাতীয় কিছু একটা না করা হলে পানিঘাটা আর থাকবে কিনা তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন রয়েছে। বিশ্বনাথ লোহার নামে এক শ্রমিক বলেন, গত ৭-৮ বছর ধরে নদী ভাঙন মারাত্মক আকার ধারন করেছে। গত বর্ষায় তা আরো বেশি হয়। আগামীতে যে কি হবে তা চিন্তা করলেই শিউরে উঠি। দূর্গা দাস নামে আরেক স্থানীয় প্রবীণ বলছেন, ডায়না যে কখনো এভাবে আতঙ্ক ছড়াবে কখনই ভাবি নি। গত দু বছর ধরে সমস্যা সবচেয়ে বেশী। দ্রুত পদক্ষেপ দরকার।