বামনগোলা: খাটে শয্যাশায়ী এক বধূ। গায়ে কম্বল জড়ানো। বাঁশে ঝোলানো সেই খাট নিয়ে কাঁচা রাস্তা দিয়ে ছুটে চলেছেন দুই যুবক। ভাইরাল ভিডিওটি বামনগোলার মালডাঙ্গা বুথের। জ্বরে আক্রান্ত ওই বধূকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তাঁরা। তবে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই বধূর মৃত্যু হয়। এরপরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয়রা। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ছবি তুলে ধরে ক্ষোভ উগরে দেন স্থানীয় বাসিন্দা তথা জেলা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য বীণা কীর্তনিয়া সরকার।
তিনি সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, ‘আমার মালডাঙ্গা বুথের রাস্তা নেই। তাই ১৯ বছরের মেয়েটা মারা গেল। ডিএম, বিডিও নাটক করে টিএমসি নেতাদের সঙ্গে যখন যে বুথে যাবেন, তখন এই প্রশ্নগুলো করুন। নাহলে ৫০০ টাকা খেয়ে চুপ থাকুন, আপনার ঘরের ছেলেমেয়েরা যেদিন এমন অবস্থা হবে সেদিন বুঝবেন।’
বামনগোলার গোবিন্দপুর-মহেশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মালডাঙ্গা গ্রামের বধূ মামণি রায় (২৫)। তাঁর স্বামী কার্তিক রায় কৃষক। পরিবারের দাবি, বৃহস্পতিবার থেকেই জ্বরে ভুগছিলেন মামণি। শুক্রবার পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু মালডাঙ্গা গ্রাম থেকে বামনগোলা গ্রামীণ হাসপাতালের দূরত্ব দশ কিলোমিটার। তার আগে মালডাঙ্গা গ্রাম থেকে রাজ্য সড়ক পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার কাঁচা বেহাল রাস্তা। গ্রামে বেহাল রাস্তার কারণে ঢোকে না গাড়ি বা অ্যাম্বুল্যান্স। অগত্যা খাটে দড়ি বেঁধে বাঁশে করে নিয়ে যায় গ্রামবাসী। কিন্তু বেহাল রাস্তার কারণে হাসপাতালে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যায়।
হাসপাতালে পৌঁছানোর পর চিকিৎসকরা মামণিকে মৃত বলে জানান। চিকিৎসকদের দাবি, আর কিছুক্ষণ আগে আসলে রোগীকে বাঁচানো যেত। পুলিশ আপাতত দেহটি হাসপাতালে রেখেছে। এই ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এলাকাবাসীর দাবি, রাস্তা ভালো হলে ওই বধূকে প্রাণ হারাতে হত না।
মালডাঙ্গার এই রাস্তা দিয়ে রোজ কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করে। এই রাস্তার উপর নির্ভরশীল মালডাঙ্গা, সায়েস্তাবাদ, নপাড়া, হাড়িভাঙ্গা, আইগমতারা সহ বেশকিছু গ্রামের মানুষ। বেহাল রাস্তার কারণে প্রসূতি ও গুরুতর অসুস্থদের রাতবিরেতে নিয়ে যেতে ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে পড়তে হয় বলে অভিযোগ বীণা কীর্তনিয়া সরকারের। তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘এই বুথের পাঁচকিমি রাস্তার জন্য কতবার আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু শাসকদলের নেতা-কর্মীদের হুঁশ নেই। আজ যদি রাস্তা ভালো হত তাহলে এই তরতাজা প্রাণটিকে হারাতে হত না। অথচ ভোটের আগে নেতারা ঠিক প্রতিশ্রুতির ঝুলি নিয়ে হাজির হয়ে যাবেন। আর যেন কোনও গ্রামবাসীকে প্রাণ হারাতে না হয়, সেজন্য আমরা আন্দোলনে নামব। অবিলম্বে রাস্তা পাকা করতে হবে।’
এদিকে এবিষয়ে বিডিও রাজু কুণ্ডুকে ঘটনার কথা বলা হলে তিনি বেহাল রাস্তার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘আমি জানি এই এলাকার পাঁচ কিমি রাস্তা বেহাল। এই রাস্তা পাকা করার দাবিতে এর আগে আন্দোলনও হয়েছে। তবে আমরা রাস্তার জন্য স্কিম করে পাঠিয়েছি। আশা করি, খুব তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এদিকে এই ঘটনায় এদিন পথ অবরোধ করে বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন স্থানীয়রা।