বর্ধমানঃ রাস্তার ওপর ইট সাজিয়ে রাখার প্রতিবাদ করায় খুন হতে হল প্রতিবাদীকে। নজিরবিহীন এই খুনের ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর নওপাড়া এলাকায়। মৃতের নাম আসগর শেখ (৪২)। মামা আসগরকে বাঁচাতে গিয়ে উন্মত্ত প্রতিবেশীদের মারে জখম হয়েছেন ভাগ্নে ফিরোজ শেখ। কালনা মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সপ্তর্ষি ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন, ‘মৃতর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে পূর্বস্থলী থানার পুলিশ তিন মহিলা সহ ছয় জনকে গ্রেপ্তার করেছে’। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম নূর নবি শেখ, ইউসুফ শেখ, মোচা নবি শেখ, সায়রা বানু, রুপালী বিবি ও নার্গিস বিবি। এঁরা প্রত্যেকেই নওপাড়ার বাসিন্দা’। অভিযুক্তদের দৃষ্টান্ত মূলক সাজার দাবি তুলেছেন নিহতের পরিবার।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আসগর শেখের বাড়ি পূর্বস্থলী থানার নওপাড়া এলাকায়। একই পাড়ার বাসিন্দা বছর ৩৬ বয়সী ফিরোজ শেখ। এই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে মামা ভাগ্নের সম্পর্ক। দু’জনেই পেশায় ব্যবসায়ী। আসগরকে খুনের ঘটনাটি ঘটেছে সোমবাব গভীর রাতে। পরিবার সদস্যরা জানিয়েছেন, আসগর তাঁর ভাগ্নে ফিরোজকে সঙ্গে নিয়ে সোমবার স্থানীয় পাটুলি এলাকায় নবান্ন উৎসব দেখতে গিয়ে ছিলেন। সেই উৎসব দেখে গাড়িতে একটু রাত করেই ফিরছিলেন দুজনে। রাত প্রায় আড়াইটে নাগাদ তারা দফরপোতা-নওপাড়া রোড হয়ে নওপাড়া গ্রামে ঢুকতে গিয়ে দেখেন রাস্তার উপর প্রচুর ইট ফেলে রাখা রয়েছে। এর ফলে সেই পথ দিয়ে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যেতে অসুবিধায় পড়েন তাঁরা। এরপরই আসগর গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার ওপর থেকে ইট সরাতে শুরু করেন।
পরিবারের অভিযোগ আসগর ও ফিরোজ যখন রাস্তার উপরে পড়ে থাকা ইট সরাচ্ছিলেন তখনই প্রতিবেশী পরিবারের নূর নবি শেখ, ইউসুফ শেখ, মোচা নবি শেখ, সায়রা বানু, রুপালী বিবি ও নার্গিস বিবি-রা বাধা দেয়। ইটের উপর দিয়ে চারচাকা গাড়ি নিয়ে যেতে দিতে তারা আপত্তি কর। তখনই রাস্তার উপরে অজস্র ইট ফেলে রাখার প্রতিবাদ করে আসগর ও ফিরোজ। তা নিয়ে বচসা বেঁধে দুপক্ষের মধ্যে। বচসা চলাকালীন আসগর ও ফিরোজকে মারধোর শুরু করে প্রতিবেশী যুবকের দল। আচমকাই এক যুবক রড দিয়ে আসগরে মাথায় সজোরে মারে বলে অভিযোগ। মারধোর করা হয় ফিরোজকেও। কোনওরকমে হামলাকারীদের হাত ছাড়িয়ে ফিরোজ সেখান থেকে পালাতে সক্ষম হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় পথে লুটিয়ে পড়ে থাকা আসগারকে উদ্ধার করে এদিন ভোর রাতে কালনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষ রক্ষা হয় নি। কালনা হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আসগরকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এর পরেই আসগরকে খুনের অভিযোগে প্রতিবেশী পরিবারের আটজনের নামে পূর্বস্থলী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন পরিবারের লোকেরা। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করে তদন্তে নামে।
একে একে পুলিশ ছয় অভিযুক্ত নূর নবি শেখ, ইউসুফ শেখ, মোচা নবি শেখ, সায়রা বানু, রুপালী বিবি ও নার্গিস বিবিকে গ্রেপ্তার করে। বাকি দুই অভিযুক্ত আক্কেল শেখ ও রুস্তম শেখ এখনও পলাতক রয়েছে। পুলিশ তাদেরও খোঁজ চালাচ্ছে। এদিন ছয় ধৃতকেই পেশ করে কালনা মহকুমা আদালতে। বিচারক ধৃত তিন মহিলাকে জেল হেপাজত এবং বাকিদের পুলিশ হেপাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।