দিনহাটা: লোকসভা ভোটের (Lok Sabha Election 2024) বাকি কাঁটায় কাঁটায় এক মাস। আগামী ১৯ এপ্রিল ভোট। আর ১৯ মার্চ রাতে দিনহাটায় (Dinhata) পাঁচমাথার মোড়ে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন নিশীথ প্রামাণিক (Nisith Pramanik) ও উদয়ন গুহ (Udayan Guha)। এমনিতেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর এলাকা বলে পরিচিত দিনহাটা রাজনৈতিকভাবে বছরভরই উত্তপ্ত থাকে। তার উপর মঙ্গলবারের ঘটনা ভোটের গা ঘেঁষে সেই উত্তাপ আরও বাড়িয়ে তুলল বলে মনে করা হচ্ছে। গতকালের ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার ২৪ ঘণ্টার দিনহাটা বনধের (Dinhata Bandh) ডাক দিয়েছে তৃণমূল। সেইমতো এদিন সকাল ৬টা থেকে বনধ শুরু হয়েছে। চলবে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত। সকাল থেকেই শুনশান হয়ে রয়েছে দিনহাটার রাস্তাঘাট। দোকানপাট কার্যত বন্ধ রয়েছে। রাস্তায় খুব বেশি লোকজনের দেখা মেলেনি। যানবাহন প্রায় চলছে না বললেই চলে।
গতরাতে পাঁচমাথার মোড়ে তৃণমূল পার্টি অফিসের শ-দুয়েক মিটার দূরে হুলুস্থুলু বেধে যায়। নিশীথ-উদয়ন তো বটেই, ধস্তাধস্তিতে পিছিয়ে ছিলেন না ওই দুই কেন্দ্র ও রাজ্যের মন্ত্রীর অনুগামীরাও। শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দুই মন্ত্রীর হাতাহাতিতে উত্তাপ বাড়তেই কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশ এলাকার দখল নিয়ে নেয়। ঝটপট বন্ধ হয়ে যায় আশপাশের দোকানের শাটার।
ঘটনার সূত্রপাত রাত ন’টা নাগাদ। তখন নিশীথের কনভয় নিগমনগর থেকে ফিরছিল। গতকালই আবার উদয়নের জন্মদিন ছিল। সেই সময়ই সাহেবগঞ্জ রোডে দিনহাটা পুরসভার চেয়ারম্যান গৌরীশংকর মাহেশ্বরীর বাড়ির সামনে উদয়নের জন্মদিন পালন করা হচ্ছিল। সেই উপলক্ষ্যে তখন সেখানে শতাধিক তৃণমূল কর্মী জড়ো হয়েছিলেন। দুই পক্ষ মুখোমুখি হয়ে পড়ার ফলেই বিতণ্ডার সূত্রপাত। এতে একে-অপরের উপর দায় চাপিয়ে দিয়েছে তৃণমূল ও বিজেপি।
তৃণমূলের অভিযোগ, হঠাৎই নিশীথের কনভয় থেকে নেমে কেন্দ্রীয় জওয়ানরা তৃণমূলের কর্মীদের উপর লাঠিচার্জ করতে শুরু করেন। এদিকে বিজেপির জেলা সম্পাদক অজয় রায়ের পালটা অভিযোগ, আগে নিশীথের কনভয়ের উপর হামলা চালানো হয়। গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। তারপর জওয়ানরা বেরিয়ে আসেন।
তৃণমূলের আরও দাবি, ওই জওয়ানরা রাজ্য পুলিশের এক আধিকারিককেও মারধর করেন। এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকের পাশাপাশি দিনহাটা থানার এসডিপিও ধীমান মিত্রেরও মাথা ফাটে। বর্তমান সকলেই দিনহাটা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এই ঘটনার পরেই উদয়ন আসরে নামেন। একসময় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান ও রাজ্য পুলিশের মধ্যেও ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়।
উদয়নের কথায়, ‘জন্মদিনের অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফিরছিলাম। সেসময় নিশীথের কনভয় হঠাৎই থেমে যায় এবং সেখান থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা নেমে মারধর শুরু করে। তির ও পাথরও ছোড়ে। আমি বিষয়টি রাজ্য নেতাদের জানাব।’
রাজনৈতিক মহলের মতে, এই ঘটনায় আদতে বিজেপির হাতেই একটা বড় ইস্যু চলে এল। প্রার্থী হিসেবে নিশীথের নামই আগে ঘোষণা করা হলেও প্রচারে এখনও অবধি এগিয়ে ছিল তৃণমূলই। কিন্তু এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এবার প্রচারে হইচই ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বিজেপি। ফ্রন্টফুটে থাকা তৃণমূল এর ফলে আসন্ন নির্বাচনে সমস্যায় পড়তে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।