মানিকচক: গত কয়েকদিন ধরে চলছে লাগাতার বৃষ্টি। আর এই প্রবল বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে মানিকচকের সবজি চাষিরা। গত কয়েক দিনের লাগাতার বৃষ্টিতে মানিকচকের নুরপুরের বিঘার পর বিঘা সবজি ক্ষেত জলের তলায়। প্রায় ৩০০ বিঘার ও বেশি সবজি খেত ক্ষতিগ্রস্ত। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে বাঁধাকপি চাষিরা। ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকার বেশি বলে দাবি সবজি চাষিদের। কিন্তু সবকিছু জেনেও নীরব প্রশাসন। গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মারফত বারবার প্রশাসনের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। সবজি খেতে জমে থাকা জল বের করতে কোনরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি প্রশাসন। শেষমেষ সবজি চাষিরা নিজেরাই জল নিকাশির উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। নিজেরা চাঁদা তুলে জল বের করার ব্যবস্থা করলেন স্থানীয় সবজি চাষিরা। চলছে পাম্পের মাধ্যমে জল নিকাশির কাজ।
মানিকচকের নুরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সবজি পাড়া সহ প্রায় সমস্ত পঞ্চায়েত এলাকা জুড়ে চলে সবজি চাষ। এই এলাকার মানুষজন অন্যান্য ফসল ছাড়া সবজি উৎপাদনে বেশি আগ্রহী। সবচেয়ে বেশি আগ্রহী এই এলাকার সবজি পাড়ার লোকজন। এই সবজি পাড়ায় প্রায় ২৩৫টি পরিবারের বাস। এরা সকলেই সবজি চাষের সঙ্গে যুক্ত। বর্তমানে নুরপুর মৌজার প্রায় ৩০০ বিঘা জমিতে সবজি চাষ করা হয়েছে। চাষ করা জমির ৮০ শতাংশ জমিতেই বাঁধাকপি চাষ হয়েছে। বাকি জমিতে ফুলকপি, ঢ্যাঁরস ও বিভিন্ন রকম শাক চাষ করেছেন চাষিরা। গত কয়েকদিনে লাগাতার বৃষ্টিতে জমিতে জল দাঁড়িয়েছে। আর এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে বাঁধাকপি চাষের। বাঁধাকপি চাষিদের আক্ষেপ, গরমের মরশুমে বাড়তি লাভের আশায় অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে বাঁধাকপি ও ফুলকপি চাষ করেছিলেন। চাষের খরচের পরিমাণও ছিল অনেক বেশি। গরমের মরশুমে প্রচন্ড দাবদাহে বাঁধাকপি চারা গাছ নষ্ট হয়ে যায়। কিছুই বাড়ি নিয়ে যেতে পারেননি চাষিরা। আবারও লাভের আশায় বাঁধাকপির চাষ করেছিলেন তারা। কিন্তু প্রবল বৃষ্টিতে ফের তাঁরা ক্ষতির মুখে। বাঁধাকপি চাষিদের দাবি, আরও দু-এক দিন এইরকম লাগাতার বৃষ্টি চললে বাঁধাকপি জমিতেই নষ্ট হবে। বাঁধাকপি ও ফুলকপি চাষে বিঘা প্রতি খরচ হয় ২৫ হাজার থেকে ত্রিশ হাজার টাকা । বিঘা প্রতি লাভও হয় হাজার দশকের মত। সবজি পাড়ার প্রায় সকলেরই নিজস্ব জমি আছে। যাদের জমি নেই তারাও মোটা টাকার বিনিময়ে লিজে জমি নিয়ে সবজি চাষ করেন। গতবার প্রচন্ড দাবদাহে প্রচন্ড ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন সবজি চাষিরা। তাই এবার সবজি চাষের ক্ষেত্রে অনেকেই মহাজনি সুদে টাকা নিয়ে সবজি চাষ করেছেন। তাই এই এলাকার সবজি চাষিদের দাবি, আরও দু-এক দিন লাগাতার বৃষ্টি চললে এবং সবজি খেতে জমা জল নিকাশিতে প্রশাসন কোনও উদ্যোগ গ্রহণ না করলে তাদের পরিবার নিয়ে পথে বসতে হবে।
সবজি চাষি তেজাব মিয়াঁ বলেন, ‘গরমের সময় প্রচন্ড সূর্যের তাপে বাঁধাকপি ফুলকপি জমিতেই নষ্ট হয়ে গেছিল। এবার অনেক আশা নিয়ে বাঁধাকপি ও ফুলকপি চাষ করেছি। আমার নয় বিঘা জমির আট বিঘাতে বাঁধাকপি চাষ করেছি। কিন্তু যেভাবে বৃষ্টি চলছে তাতে মনে হচ্ছে জমিতেই বাঁধাকপি পচে নষ্ট হয়ে যাবে। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যকে জানিয়েছি। প্রধানকে জানিয়েছি। কিন্তু কেউ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। শেষমেষ আমরা নিজেরাই চাঁদা তুলে পাম্পের মাধ্যমে জল নিকাশির ব্যবস্থা করেছি।’ এই বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিল স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য নিজাম মিয়ার সঙ্গে। তিনি ও সবজি চাষি। তিনি এবার আট বিঘা জমিতে বাঁধাকপি চাষ করেছেন। প্রবল বৃষ্টিতে তার চাষ করা জমিও জলের তলায়। নিজাম মিয়াঁ দাবি করেন, ‘সমস্ত বিষয়টি প্রধান কে জানিয়েছি। প্রধান কৃষি আধিকারিককে সবজি চাষিদের আবেদনের কথা জানিয়েছেন। খুব শীঘ্রই জল নিকাশিতে প্রশাসনগতভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।